ঢাকা অফিস
আম বয়ানের মধ্য দিয়ে আজ শুক্রবার শুরু হয়েছে টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। আর সেখানে একসঙ্গে জুমার নামাজ আদায় করেছেন দেশ-বিদেশের লাখো ধর্মপ্রাণ মুসল্লি। নামাজ শেষে দুই হাত তুলে আল্লাহর কাছে অশ্রুসিক্ত চোখে প্রার্থনা করেন তারা। ইজতেমায় সবচেয়ে বড় জুমা জামাতের ইমামতি করেন কাকরাইল জামে মসজিদে পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা জুবায়ের আহম্মেদ।
বাদ জুমা বয়ান করবেন ভারতের মাওলানা ইসমাইল গুদরা। বাদ আসর বয়ান করবেন হাফেজ মাওলানা জুবায়ের আহম্মেদ ও বাদ মাগরিব ভারতের মাওলানা আহম্মেদ লাট। তাঁর বয়ান বাংলায় অনুবাদ করবেন বাংলাদেশের মাওলানা ওমর ফারুক। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিশ্ব ইজতেমা আয়োজক কমিটির গণমাধ্যম সমন্বয়কারী মুফতি জহির ইবনে মুসলিম।
শুক্রবার দুপুরে ইজতেমা প্রাঙ্গণে সরেজমিনে দেখা যায়, রাজধানীর উত্তরা, গাজীপুর ও টঙ্গীসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে লাখো মুসল্লি ইজতেমায় অংশ নিয়েছেন। শুক্রবার সকাল থেকেই সড়ক পথ, রেলপথ ও নৌপথসহ সব পথেই টঙ্গীর তুরাগ তীরে ঢল নামে মুসল্লিদের।
দুপুর ১২টা ১৫ মিনিটে হয় জুমার আজান,১টা ৪০ মিনিটে শুরু হয় জুমার খুতবা। দুপুর ১টা ৪৫ মিনিটে শুরু হয় জুমার নামাজ, শেষ হয় দুপুর ১টা ৫২ মিনিটে। ৫৬ তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের আজ প্রথম দিন। কনকনে শীত উপেক্ষা করে শুক্রবার সকাল থেকে লাখো মুসল্লি বয়ান, তাশকিল, তাসবিহ-তাহলিলে কাটাচ্ছেন।
জুমায় ভিআইপিদের অংশগ্রহণ
বরাবরের মতোই জুমার নামাজের ভিআইপিদের অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়। উচ্চ আদালতের বিচারপতি কামরুল হাসান মোল্লা, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশন গাজী মোহাম্মদ হোসেন, গাজীপুর সিটি করপোরেশন ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ, গাজীপুর জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মেল্যা নজরুল ইসলাম প্রমুখ।
বিদেশি মেহমান
বিদেশি মুসল্লিদের জন্য বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সিসি ক্যামেরায় বিদেশীদের প্রতিটি খিত্তা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত ৫১টি দেশের চার হাজার ৩৬১ জন বিদেশি ময়দানে অবস্থান করছেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার বাদ যোহর থেকেই মুসল্লিদের ইবাদত বন্দেগিতে মুখর হয়ে উঠেছে টঙ্গীর তুরাগ তীর। শুক্রবার বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভিড় বাড়ে তুরাগ তীরে। বেলা একটা পঁয়তাল্লিশ মিনিটে লাখো মুসল্লির অংশগ্রহণে আদায় করা হবে পবিত্র জুমার নামাজ।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রায় দশ হাজার পুলিশ সদস্য কয়েকটি স্তরে কাজ করছে। ময়দান ও তার আশপাশের পুলিশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।’
ইজতেমা আয়োজক কমিটির গণমাধ্যম সমন্বয়কারী মুফতি জহির ইবনে মুসলিম বলেন, ‘জুমার নামাজের অংশ নিতে প্রায় দশ লাখ মুসল্লি ময়দান ও তার আশপাশের সড়ক ও এলাকায় অংশ নিয়েছেন। নামাজ শেষে এখন বয়ান হচ্ছে। দেশ ও বিদেশ থেকে এখনো মুসল্লিরা ময়দানে আসছেন। ময়দানে মুসল্লি ধারণের জায়গা নেই। যদি আশপাশের মসজিদ, মাদ্রাসা ও স্কুল মাঠগুলো উন্মুক্ত করে দেওয়া হতো, সেই সঙ্গে নিজ উদ্যোগে মাইকের ব্যবস্থা করা হতো তবে ময়দানে আগত মুসল্লিদের কষ্ট লাঘব হতো।’
উল্লেখ্য, আগামী ১৫ জানুয়ারি রোববার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে প্রথম পর্বের ইজতেমা। মাঝে চার দিন বিরতি দিয়ে ২০ জানুয়ারি শুরু হবে দ্বিতীয় পর্ব। ২২ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে এবারের বিশ্ব ইজতেমার দুই পর্বের সমাপ্তি হবে।