যশোর বিএনপির সিদ্ধান্তকে বৃদ্ধাঙ্গুলি
নিজস্ব প্রতিবেদক
বিএনপির সাংগঠনিক সিদ্ধান্তকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে চলেছেন নওয়াপাড়া পৌর বিএনপির পদ স্থগিত থাকা আসাদুজ্জামান জনি। তাকে বিএনপির রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড করতে নিষেধ করা হলেও গতকাল অভয়নগর থানা ও নওয়াপাড়া পৌর বিএনপি আয়োজিত কর্মসূচিতে ছিলেন আগ্রভাগে। আর বক্তব্যে শেখ হাসিনাকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলে সম্বোধন করেন। এঘটনায় উপস্থিত বিএনপি নেতাকর্মীদের মনে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। এদিকে, জেলা বিএনপি স্পষ্ট করে বলেছে, পদ স্থগিত কোন নেতার দলীয় কর্মকাণ্ডে অংশ নেওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু জনি এসবের ধার ধারছেন না।
সূত্র মতে, গতকাল (৮ মে) অভয়নগর থানা, নওয়াপাড়া পৌর বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের ব্যানার ব্যবহার করে আনন্দ মিছিল ও সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সেই মিছিলের নেতৃত্ব দিতে দেখা যায় পদ স্থগিত নেতা আসাদুজ্জামান জনিকে। আনন্দ মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্যও রাখেন তিনি। এদিকে জেলা বিএনপি ও অভয়নগর উপজেলা বিএনপির দায়িত্বশীল একাধিক নেতার সাথে কথা বলে জানা যায় দলীয়ভাবে এমন কোন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়নি। এমনকি সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পর্যায়ের কোন নেতা এতে অংশ নেয়নি। জনির পকেটের কিছু লোক সংগঠনের ব্যানার ব্যবহার করে এই কর্মসূচির আয়োজন করে। যাদের মধ্যে অভয়নগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম গিয়াস উদ্দীন, পৌর বিএনপির সহসভাপতি সেলিম রেজা, সহ সম্পাদক বাচ্চু, উপজেলা বিএনপির সদস্য মশিয়ার রহমান মশি, পৌর নেতা ইকবাল কুরায়েসি, চল্লিশিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মোহাম্মদ আলী, অভয়নগর থানা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুদ পারভেজ সাথী, পৌর ছাত্রদলের আহ্বায়ক আসাদুজ্জামান ইমন উল্লেখযোগ্য।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নেতাকর্মী জানান, জনির ডাকে কেউ সাড়া দিচ্ছেন অর্থের লোভে আবার কেউ প্রাণনাশের ভয়ে এসব কর্মসূচিতে আসছেন। বিষয়টি নিয়ে তৃণমূলে নানা প্রশ্ন উঠলেও ভয়ে কেউ কথা বলতে পারছেন না।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ২০ নভেম্বর দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে নওয়াপাড়া পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান জনির দলীয় পদ ও রাজনৈতিক কর্মকান্ড স্থগিত’র নির্দেশ দেয় জেলা বিএনপি। নির্দেশ অনুযায়ী বিএনপির কোন কর্মসূচি পালনের সুযোগ নেই জনির। তাহলে কিভাবে প্রকাশ্যে দলীয় ব্যানারে মিছিল মিটিং করছে পদ স্থগিত এই নেতা?
অভয়নগর উপজেলা বিএনপির একাধিক নেতাকর্মীর সাথে কথা বলে জানা যায়, দলীয় কোন সিদ্ধান্তের তোয়াক্কা করেন না জনি। নিজ বাহিনী দিয়েই তিনি এসব কর্মসূচি পালন করছেন। যেখানে দলের দায়িত্বশীল কোন নেতারা উপস্থিত না থাকলেও উপজেলা, পৌর, ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ড বিএনপির কিছু নেতা উপস্থিত থাকছেন।
পদ স্থগিত জনির কর্মসূচির অগ্রভাগে থাকা নিয়ে অবাক হয়েছেন জেলা বিএনপির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক।
জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট সাবেরুল হক সাবু বলেন, আসাদুজ্জামান জনির দলীয় পদ স্থগিতের পাশাপাশি তার রাজনৈতিক সকল কর্মকাণ্ড স্থগিত করা হয়েছে। ফলে দলের ব্যানারে তার কোন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করার সুযোগ নেই।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন খোকনও একই সুরে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, দলীয় শৃঙ্খলা যারা ভঙ্গ করবে তাদের ব্যাপারে সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। যেহেতু জনির সকল কর্মকাণ্ড স্থগিত করা হয়েছে। তাকে নিয়ে যদি বিএনপির কোন নেতা কর্মসূচি পালন করে তার বিরুদ্ধেও আমরা ব্যবস্থা নিবো।
কর্মসূচিতে থাকা জনির পকেটের লোক হিসেবে পরিচিত অভয়নগর উপজেলা বিএনপির সদস্য মশিয়ার রহমান মশি বলেন, তাকে তো স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়নি, সাময়িক পদ স্থগিত করা হয়েছে। তিনি বলেন, বিএনপির একজন কর্মী হিসেবে মঞ্চে বক্তব্য দিয়েছেন আসাদুজ্জামান জনি।
আনন্দ মিছিলের মঞ্চে গণমাধ্যম নিয়ে জনির বিষোদগার : অনুষ্ঠিত আনন্দ মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে গণমাধ্যম নিয়ে বিষোদগার করেছেন আসাদুজ্জামান জনি। বক্তব্যকালে তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন মেডেল কিনে আনতো তখন বাংলাদেশের সকল সাংবাদিকরা উনাকে এমনভাবে তোষামোদি করতো, মনে হয় যেন বাংলাদেশ রাতারাতি আমেরিকা হয়ে গেছে। আজকে সেই সকল সাংবাদিকরা রাতারাতি বিএনপি হয়ে গেছে।
