নিজস্ব প্রতিবেদক
অতিরিক্ত কত মিনিটের খেলা হবে তার বোর্ড তৈরি করছিলেন চতুর্থ রেফারি লাবু জোয়ার্দার। মাঠে উপস্থিত দর্শকরাও টাইব্রেকারে দেখার প্রস্তুতি নিচ্ছিলো। ম্যাচের নির্ধারিত সময়ের আর এক মিনিট বাকি। এমন সময় ডি-বক্সের বাইরে ফ্রি কিক পায় মনিরামপুর উপজেলা। ইমাম হোসেনের নেওয়া ফ্রি কিক থেকে ছোট ডি বক্সের মাথায় দাঁড়ানো শেখ মেহেদী গোলবার লক্ষ্য করে হেড দেন। তার নেওয়া হেড কিছুটা প্রতিহত করে রক্ষণভাগের একজন খেলোয়াড়। সেই প্রতিহতটা খুব বেশি নিরাপদ ছিলো না। বল পেয়ে যান বড় ডি বক্সের মধ্যে থাকা সুজিত সরকার। ডানপাঁয়ে যে শটটি নেন তা গোলরক্ষকের করার কিছুই ছিলো না। তার বামদিক দিয়ে বলটির ঠাঁই হয় বাঘারপাড়ার জালে।
সুজিতের শেষ মিনিটে এ গোলে যশোর জেলা প্রশাসক গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের জয় পেয়েছে মনিরামপুর উপজেলা। বাঘারপাড়াকে হারিয়ে টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় দল হিসেবে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছে মনিরামপুর উপজেলা। আগামী ১৬ নভেম্বর টুর্নামেন্টের প্রথম সেমিফাইনালে সদর উপজেলার মুখোমুখি হবে মনিরামপুর। ম্যাচ সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছেন ম্যাচের একমাত্র গোলদাতা সুজিত সরকার।
ম্যাচে দু’দলের বল দখলের লড়াইটা ছিল সমানে সমান। দু’টি দলই গোল পেতে আক্রমণ চালিয়েছে ঠিকই। কিন্তু ফিনিশিংয়ের অভাবে গোল পাওয়া যেন সোনার হরিণ হয়ে দাঁড়ায়। তবে গোলের জন্য আক্রমণের ধার কিছুটা বেশি ছিল মণিরামপুরের। ম্যাচের প্রথমার্ধে দু’টি দল আক্রমণ ও পাল্টা আক্রমণ করলেও গোল করার মত উল্লেখযোগ্য তেমন কিছুই হয়নি। ফলে প্রথমার্ধ শেষ হয় গোলশূন্য সমতায়।
বিরতি থেকে ফিরে দ্বিতীয়ার্ধের তিন মিনিটে গোলের সুযোগ তৈরি করে বাঘারপাড়া। আশরাফুলের জোরালো শট গোলবারের বেশ কিছুটা বাইরে দিয়ে চলে মাঠের বাইরে। এর এক মিনিট পর গোলের সুযোগ তৈরি করে মনিরামপুর। ডানপ্রান্ত থেকে বল পেয়ে বড় ডি-বক্স পেরিয়ে ছোট ডি বক্সের মধ্যে একেবারে গোলরক্ষককে একা পেয়ে যান সজীব কর। বাঘারপাড়ার গোলরক্ষক অত্যান্ত দক্ষতার সাথে দলকে রক্ষা করেন।
ম্যাচের ৫৮ মিনিটে বদলি হিসেবে নামা ইমাম হোসেনের কর্ণার কিক থেকে কিছুটা গোলের সুযোগ তৈরি হয় মণিরামপুরের। কয়েক জন খেলোয়াড়ের মাধ্যমে বড় ডি বক্সের মধ্যে বল পান বাধন বিশ্বাস। তার নেওয়া শট ক্রসবার উচিয়ে চলে যায় মাঠের বাইরে।
৬২ মিনিটে শান্তর মাইনাস থেকে বল পেয়ে বড় ডি বক্সের মাথা থেকে প্রকাশ আড়াআড়িভাবে ঠেলে দেন আশরাফুলের কাছে। কিন্তু গোলবার লক্ষ্য করে নেওয়া তার শটটি চলে যায় ক্রসবার উচিয়ে মাঠের বাইরে।
৬৪ মিনিটে মণিরামপুরের বিদেশি খেলোয়াড় রেফারির সাথে যে আচরণ করেন তা ছিলো দৃষ্টিকটু। তিনি রেফারি জিল্লুর রহমানের উপর চড়াও হওয়ার চেষ্টা করেন। হাতাহাতি করতে দেখা গেছে রেফারির সাথে। ফুটবল ম্যাচে নানা ধরণের ঘটনা ঘটে। কিন্তু আধুনিক ফুটবলে যা মানান সই নয়। এমন আচরণের জন্য তিনি হলুদ কার্ড দেখেন। তবে টুর্নামেন্ট কমিটি তার এই আচরণের জন্য কোন ধরণের পদক্ষেপ নেন সেটাই দেখার বিষয়।
৬৭ মিনিটে এবার গোলের কাছাকাছি এসেও গোল বঞ্চিত হয় মণিরামপুর। অনেকটা একক প্রচেষ্টায় কংকর বিশ্বাস দ্রুত গতিতে ঢুকে পড়েন বাঘারপাড়ার রক্ষণভাগে। এরপর রক্ষণভাগের দু’জনকে পরাস্ত করে বড় ডি বক্সের মধ্যে থেকে যে শটটি নেন তা সাইডবারের কিছুটা বাইরে দিয়ে চলে যায় মাঠের বাইরে। ৭৯ মিনিট মণিরামপুর উপজেলার জন্য লাকি হিসেবে ধরা দেয়। এ সময় প্রায় কর্ণার ফ্লাগ থেকে ফ্রি কিক পায় তারা।
অন্তিম সময়ে গোল সমতায় ফেরা ও গোল ব্যবধান বাড়ানোর প্রচেষ্টা থাকলেও কোন গোল আদায় করে নিতে পারেনি দু’টি দল। ফলে ১-০ গোলের জয় নিয়েই সেমিফাইনালে ওঠা নিশ্চিত করে মাঠ ছাড়ে মণিরামপুর উপজেলার খেলোয়াড়রা।
