আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ভারতশাসিত কাশ্মিরে সেনাবাহিনীর হেফাজতে ৩ বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করার অভিযোগ উঠেছে। নিহত ওই তিনজনকেই ভারতীয় সেনাবাহিনী তুলে নিয়ে গিয়েছিল। পরে সেনা হেফাজতেই মৃত্যু হয় তাদের।
এই ঘটনায় কাশ্মিরে জনগণের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। একইসঙ্গে হেফাজতে হত্যার তদন্তের আহ্বানও জানিয়েছেন তারা। রোববার (২৪ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতশাসিত কাশ্মিরে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মারাত্মক আক্রমণের পরিপ্রেক্ষিতে ভারতীয় সেনাবাহিনী কাশ্মিরের তিন বেসামরিক নাগরিককে তুলে নিয়ে যায়। পরে সেনা হেফাজতে ওই নাগরিকের মৃত্যু উপত্যকাটির মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে এবং তারা হেফাজতে হত্যার ঘটনায় তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন।
আল জাজিরা বলছে, মোহাম্মদ শওকত (২২), সাফির হুসাইন (৪৫) এবং শাবির আহমদ (৩২) নামে তিনজনকে গত শুক্রবার সকালে কাশ্মিরের পুঞ্চ জেলার পাহাড়ি টোপা পীর গ্রাম থেকে আটক করে ভারতীয় সেনাবাহিনী। সন্দেহভাজন বিচ্ছিন্নতাবাদীদের অতর্কিত হামলার একদিন পর তাদের আটক করা হয়। ওই হামলায় কমপক্ষে পাঁচজন ভারতীয় সেনা নিহত হন।
নিহত ওই তিন ব্যক্তির পরিবার বলছে, আটকের পর শুক্রবার পুলিশ তাদের স্বজনদের লাশ ফিরিয়ে নিতে ডাকার পরে তারা হতবাক হয়ে যায়। সাফির হুসাইনের ভাই নূর আহমেদ বলেছেন, ‘তার শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন ছিল। এটা কোন ধরনের ন্যায়বিচার? তিনি অত্যাধিক নির্যাতনের কারণে মারা গেছেন।’
আহমেদ বলেন, সেনাবাহিনী তার ভাই সাফিরকে তার স্ত্রী ও বাবা-মায়ের সামনে তুলে নিয়ে যায়। তিনি বলেন, ‘সরকার আমাদের জন্য চাকরি ও ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছে। তবে আমরা বিচার চাই, যারা এই নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছে তাদের শাস্তি হোক। আমার ভাইয়ের চার সন্তান আছে।’
ফোনে তিনি আরও বলেন, ‘আমরা কতটা দুঃখ-কষ্ট অনুভব করছি তা আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। পৃথিবীর কোনও অর্থই তা পূরণ করতে পারে না। সরকার আমাদের সবকিছু দেবে কিন্তু আমাদের ক্ষত পূরণ হবে না।’
ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় রাজস্থান রাজ্যে সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সেস (বিএসএফ)-এ কাজ করেন আহমেদ। ভাঙা ভাঙা কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আমি ৩২ বছর ধরে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কাজ করেছি, এর বিনিময়ে আমরা এটিই পেলাম।’
নিহত তিনজনই গুজ্জর নামে পরিচিত একটি উপজাতীয় সম্প্রদায়ের অন্তর্গত ছিলেন। এই সম্প্রদায়ের মানুষ ঐতিহ্যগতভাবে কাশ্মিরের পাহাড়ী এলাকায় চারণ জীবন যাপন করে থাকেন।
শনিবার ভারতীয় সেনাবাহিনী জানিয়েছে, এই ঘটনার তদন্ত চলছে। তবে তারা আটক ও হেফাজতে মৃত্যুর বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানায়নি। সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে দেওয়া এক বিবৃতিতে ভারতীয় সেনাবাহিনী বলেছে, ‘এলাকায় তিনজন বেসামরিক মানুষের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। বিষয়টি তদন্তাধীন। ভারতীয় সেনাবাহিনী তদন্ত পরিচালনায় পূর্ণ সমর্থন এবং সহযোগিতা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
সরাসরি নয়াদিল্লি থেকে পরিচালিত আঞ্চলিক কর্তৃপক্ষের তথ্য ও জনসংযোগ বিভাগ বলেছে, এই বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে কার বিরুদ্ধে এবং কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা উল্লেখ করা হয়নি। নিহতদের বিষয়ে মেডিকেল ও আইনি কর্মকাণ্ডের ফলাফল কী ছিল তাও প্রকাশ করেনি তারা।
শনিবার এক্সে দেওযা এক বার্তায় সংস্থাটি বলেছে, ‘গতকাল পুঞ্চ জেলার বাফলিয়াজে তিনজন বেসামরিক ব্যক্তির মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। মেডিকেল আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়েছে এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। নিহতদের প্রত্যেকের জন্য সরকার ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছে। সরকার মৃত তিনজনের নিকটাত্মীয়দের জন্য চাকরি দেওয়ার কথাও ঘোষণা করেছে।’
নিহতদের পরিবার বলেছে, সরকারের চাকরি এবং ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রস্তাব তিন কাশ্মিরিকে হত্যার ক্ষেত্রে ভারতীয় সেনাবাহিনীর সম্ভাব্য ভূমিকা থাকার দিকটিকেই ইঙ্গিত করছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মৃত বেসামরিক ব্যক্তির আরেক আত্মীয় বলেন, ‘সেনা হেফাজতে তাদের মৃত্যু না হলে সরকার ক্ষতিপূরণ ও চাকরি দেওয়ার কথা ঘোষণা করত না। তারা এই ঘটনাকে ঢাকতে চায়।’