যশোর শহরটাকে সাচ্ছন্দ চলাচলের শহরে পরিণত করা সময়ের দাবি হয়ে উঠেছে। গত ১২ মার্চ পুলিশ সুপারের সাথে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে সাংবাদিকরা এ সমস্যার কথা তুলে ধরেন। আগেকার দিনে দড়াটানা থেকে সিভিল কোর্ট, চৌরাস্তা, সদর হাসপাতাল আর বকুলতলার মধ্যে শহরটা সীমাবদ্ধ নেই। এর ব্যাপ্তি আজ একটা বৃহৎ এলাকা জুড়ে। পরিসর বাড়ার সাথে সাথে শহরে লোক সমাগম বেড়েছে, বেড়েছে যানবাহনও।
এ অবস্থায় ট্রাফিক ব্যবস্থা যদি জোরদার করা না যায় তাহলে চলাচলের ক্ষেত্রে তো সমস্যা হবেই। কিন্তু সে দিকে কারো নজর আছে বলে মনে হয় না। যাদের ওপর দায়িত্ব তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের কোনো সীমা নেই। তারা শহরে বেআইনী যান চলাচল নিয়ন্ত্রণে উদাসিন। শহরের ব্যস্ততম সড়কে লেগেই থাকে জানজট। অবৈধ ইজিবাইক, ব্যাটারি চালিত রিকশা ও নসিমন করিমনে ভরে গেছে শহর। রাতে নির্দিষ্ট সময়ের আগে শহরে প্রবেশ করছে ভারি যানবাহন। এসব অবৈধ কর্মকান্ড দেখার কেউ নেই।
আসলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আন্তরিক হলেই যানজট নিরসন কোনো কঠিন কাজ নয়। আমরা লক্ষ্য করেছি যানজট সৃষ্টির প্রধান কারণ হলো ট্রাফিক আইন মেনে না চলা। শহরে চলাচলকারী প্রতিটি রিকশার পেছনে লেখা আছে, ‘আমি শপথ করিতেছি যে ট্রাফিক আইন মেনে চলিব।’ কর্তৃপক্ষ যদি মনে করে এতেই রিকশা চালকরা ট্রাফিক আইন মেনে চলবে তাহলে বিষয়টি হবে অত্যন্ত হাস্যকর। কারণ আইন প্রয়োগ করলেই কিন্তু চলে না সে আইন বাস্তবায়ন করতে হয়। এজন্য শাস্তির বিধানও আছে। যদি তাই না হতো তাহলে বিশ্বেও কোন দেশে পুলিশ থাকতো না। এ কথাও সত্যি যে আইন বাস্তবায়ন করতে গিয়ে যদি সংশ্লিষ্টদের মধ্যে কেউ বেআইনী কাজ করে বসে তাহলে সব কিছু পন্ড হয়ে যাবে। মূল কথা হচ্ছে দেশপ্রেম দায়িত্বশীলদের কাজ করতে হবে। তাহলে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। আজ ব্যাটারি চালিত রিকশা ও ইজি বাইকের ওপর যে দোষ চাপানো তা কোনো ক্রমেই যুক্তি নির্ভর কথা নয়। শহরে এগুলো চলাচলের আধিক্য আছে ঠিকই; তাই বলে একটি বাইক অথবা রিকশাও যাত্রী না নিয়ে কি খালি ঘুরে বেড়ায়। যদি যাত্রী নিয়ে চলাচল করে তাহলে বুঝতে মানুষের প্রয়োজনের তাগিদে এগুলো চলছে। শহরে যানজট যেমন সমস্যা তেমনি যদি যানবাহন সংকট হয় তাহলে সেটা একটা সমস্যা হবে। ইতোপূর্বেও এই যানজট নিয়ে কথা উঠেছে।
মানুষের প্রয়োজনে ইজিবাইক, রিকশা প্রভৃতি চলে। কেউ রুটি-রুজির প্রয়োজনে চালায়। আবার কেউ জরুরি প্রয়োজনে তাতে চড়ে। ‘মায়ের মাজার কোথায় আর কানছি কোথায়’ এর মতো চিন্তা-চেতনাহীন পদক্ষেপ নেয়া হলে সমস্যা বাড়বে বৈ কমবে না।