সাজেদ রহমান: ১৯৪৮ সালের মার্চের ঘটনায় যশোরের মানুষের ব্যাপক অংশগ্রহণের ঘটনায় আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী ছাত্রনেতারা স্বাভাবিকভাবেই উৎসাহিত হন। আর এর ধারাবাহিকতায় যশোরের ছাত্র সমাজ ও রাজনীতিকরা বায়ান্ন-উনসত্তর-একাত্তর, প্রতিটি পর্বেই নন্দিত ভূমিকা রাখেন।
১৯৪৯ সালে আওয়ামী মুসলিম লীগের জন্ম হলে যশোরে এর আহবায়ক কমিটি গঠিত হয় এবং মুসলিম লীগের মধ্যে যাঁরা অপেক্ষাকৃত প্রগতিশীল ছিলেন তাঁরা এতে যোগ দেন। বায়ান্নতে যশোরের ৯৬ জন নেতাকর্মী গ্রেফতার হন ভাষা আন্দোলনে যোগ দিয়ে। ১৯৫৪ সালে সোহরাওয়ার্দী, মওলানা ভাসানী ও ফজলুল হকের নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্ট প্রার্থীরা যশোরের জাতীয় ও প্রাদেশিক আসনে বিজয়ী হন। আওয়ামী লীগ দ্বিধাবিভক্ত হয়ে ১৯৫৭ সালে ন্যাপের জন্ম হওয়ায় একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ন্যাপে যোগদান করলে আওয়ামী লীগ পুনঃগঠিত হয়। ১৯৫৮ সালে সামরিক আইন জারি হলে গ্রেফতার হন যশোরের অধিকাংশ রাজনৈতিক নেতা ও কর্মী।
ঘরোয়া রাজনৈতিক তৎপরতা শুরুর পর ১৯৬২ সালের ১১ অক্টোবর সোহরাওয়ার্দী যশোরে আসেন এবং এক বিশাল জনসভায় ভাষণ দেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৬ দফা দাবি পেশ করলে এর সপক্ষে সারা দেশে স্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়। যশোর জেলা থেকে ৫ লাখ স্বাক্ষর সংগ্রহ করা হয়, যা ছিল পূর্ববঙ্গের জেলাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি স্বাক্ষর সংগ্রহ। ৬ দফা দাবি ও বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন স্তব্ধ করে দেয়ার জন্য তথাকথিত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা সাজানো হয় এবং আওয়ামী লীগের মধ্যকার একাংশ পিডিএম গঠন করেন, যাঁরা ৬ দফার বিরোধী। পিডিএম-এ যোগদান করেন যশোরের শহীদ এ্যাডভোকেট মসিয়ুর রহমান, মরহুম রওশন আলীর মতো নেতারা। অন্যদিকে শহীদ এ্যাডভোকেট মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ জেলা কমিটি শত প্রতিকূলতার মধ্যেও তার অস্তিত্ব বজায় রাখে। অবশ্য বঙ্গবন্ধু মুক্তি পেলে পিডিএম-এ যাওয়া নেতারা আবার আওয়ামী লীগে ফিরে আসেন। উনসত্তরের গণআন্দোলনে সারা দেশের মধ্যে যশোরে ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য।
১৯৭০ সালের নির্বাচনে বৃহত্তর যশোরের(যশোর, ঝিনাইদহ, মাগুরা ও নড়াইল) সব কটি জাতীয় প্রাদেশিক আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন। এদের মধ্যে জাতীয় প্রাদেশিক পরিষদে ছিলেন এ্যাডভোকেট মশিয়ুর রহমান, এ্যাডভোকেট রওশন আলী, এ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম, খন্দকার আব্দুল হাফিজ, কামরুজ্জামান, সোহরাব হোসেন, ইকবাল আনোয়ারুল ইসলাম, তবিবর রহমান সরদার, আবুল ইসলাম, এ্যাডভোকেট মোশাররফ হোসেন, ডা: কাজী খাদেমুল ইসলাম, মঈনুদ্দিন মিয়াজী, এবিএম গোলাম মজিদ, জেকেএমএ আজিজ, শাহ হাদিউজ্জামান, আসাদুজ্জামান, সৈয়দ আতর আলী, এখলাস উদ্দিন আহমেদ, লে: মতিয়ার রহমান ও শহীদ আলী খান। ১৯৭১ সালে অসহযোগ আন্দোলন এবং প্রতিরোধ যুদ্ধকালে প্রধানত এদের নেতৃত্বে জনগণ সংগঠিত হয়েছে এবং সংগ্রাম কমিটি গঠন করেছে।