খুলনা প্রতিনিধি
মসজিদে জুমার নামাজের সময় নির্বাচনী প্রচারের অভিযোগ উঠেছে খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেকের বিরুদ্ধে। গতকাল শুক্রবার খুলনা মহানগরীর নিউমার্কেটের বাইতুন নূর জামে মসজিদে জুমার নামাজে অংশ নিয়ে নির্বাচনী প্রচার চালান আবদুল খালেক। তিনি মসজিদের মধ্যে পাঁচ মিনিটের বক্তব্যে মুসল্লিদের কাছে ‘দোয়া’ চেয়েছেন এবং সবাইকে ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এ সময় তার অন্তত ২০ জন কর্মীকে মসজিদের ভেতরে লিফলেট বিতরণ করতে দেখা গেছে।
নির্বাচনী আচরণবিধিতে বলা হয়েছে, কোনো প্রার্থী বা তাঁর পক্ষে কোনো রাজনৈতিক দল, অন্য কোনো ব্যক্তি, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান মসজিদ, মন্দির, গির্জা বা অন্য কোনো ধর্মীয় উপাসনালয়ে কোনো প্রকার নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে পারবেন না।
মসজিদের খাদেম শহীদুল জানান, আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক মসজিদে মুসল্লিদের উদ্দেশে পাঁচ মিনিট বক্তব্য দিয়েছেন।
মসজিদের ভেতর লিফলেট বিতরণ করা নিজাম নামের খালেকের এক কর্মী জানান, জুম্মার নামাজের পর তাঁরা প্রত্যেক মুসল্লির হাতে হাতে নৌকার লিফলেট বিতরণ করেছেন।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দীন বলেন, ‘মসজিদে খালেক সাহেবের নির্বাচনী প্রচারের বিষয়টি আমার নলেজে নেই। তবে এ বিষয়ে আমরা খোঁজ নেব। এমন ঘটনা ঘটলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।’
এদিকে নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেকের বিরুদ্ধে একের পর এক নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠলেও নিশ্চুপ রয়েছে নির্বাচন কমিশন। কেসিসি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা বলছেন, বিধিমালা লঙ্ঘনের ঘটনা তাঁদের জানা নেই।
দেয়াল ঘড়ি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী এস এম শফিকুর রহমান বলেন, ‘নৌকার প্রার্থী প্রচুর টাকা ওড়াচ্ছেন। ক্যাডার বাহিনী দিয়ে প্রচার চালাচ্ছেন।’
এ ছাড়া নির্বাচনী আচরণবিধিতে রঙিন পোস্টার বা ফেস্টুন ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও খুলনার রূপসা বাস টার্মিনালে নৌকা মার্কার প্রার্থীর পক্ষে রেক্সিনের তৈরি দুটি রঙিন ফেস্টুন দেখা গেছে।
গত বৃহস্পতিবার সরেজমিন রঙিন ফেস্টুন দেখার বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তাকে অবহিত করা হয়। এ বিষয়ে গতকাল ‘খুলনা সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর রঙিন ফেস্টুন’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়।
জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘কেসিসি নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী নানাভাবে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করছেন।
নির্বাচন কমিশন যদি সজাগ হয় তাহলে এসব অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। তবে নির্বাচন কমিশনের অবস্থান ঢিলেঢালা। আসলে আমাদের নির্বাচনী ব্যবস্থা ভেঙে গিয়েছে। নির্বাচন কমিশন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়বদ্ধতার মানসিকতা আর নেই। এরা অনেকে ক্ষমতাসীনদের অনুগত হয়ে গিয়েছে। এসব কারণে নির্বাচনব্যবস্থার ওপর, নির্বাচন কমিশনের ওপর মানুষের আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে।’
বদিউল আলম মজুমদার আরও বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তারা যদি নির্বাচনে পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করে, তাহলে নির্বাচনী অপরাধে অভিযুক্ত হতে পারে।’