নিজস্ব প্রতিবেদক
চুয়াডাঙ্গা জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের এক ক্যাশিয়ারের ঘুষ গ্রহণের দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, অধিদপ্তরের ক্যাশিয়ার উজ্জ্বল বড়ুয়া গুনে গুনে ঘুষের টাকা নিচ্ছেন।
ভিডিওটিতে ঘুষদাতা বলছেন, ‘এক্সেন স্যার বলছে, আমার নাম করে যদি কেউ এক টাকাও চায়, দেবেন না।’ জবাবে উজ্জ্বল বড়ুয়া বলেন, ‘আবার গিয়ে বলেন দাদা এই কথা বলছে, দেখবেন তখন না বলবে না।’
এরপর একজনকে কিছু টাকা উজ্জ্বল বড়ুয়ার হাতে দিতে দেখা যায়। তিনি বলেন, ‘টাকা তো সব আপনাদের অফিসেই দিয়ে দিলাম। আমাদের কিছু আছে?’ তখন উজ্জ্বল বড়ুয়াকে টাকাগুলো গুনে নিতে দেখা যায়।
ভিডিওর সময়কাল স্পষ্ট না হলেও, এটি সাম্প্রতিক বলেই মনে করা হচ্ছে। কার কাছ থেকে টাকা নেয়া হচ্ছিল, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, উজ্জ্বল বড়ুয়া ২০১৭ সালে চাকরিতে যোগদানের আগে ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করলেও বর্তমানে বিলাসবহুল দ্বিতল বাড়ির মালিক। এছাড়া তিনটি ট্রাক, একটি সিএনজি, দুটি দোকানসহ নামে-বেনামে বিপুল অর্থবিত্ত গড়েছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। দুর্নীতির বহু অভিযোগ ও আওয়ামী লীগের পদধারী হয়েও এখনো তিনি চুয়াডাঙ্গার ক্যাশিয়ার পদে বহাল তবিয়তে রয়েছেন।
একাধিক সূত্র জানিয়েছে, কক্সবাজার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে ক্যাশিয়ার পদে দায়িত্বরত থাকাকালে আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল আয় বহির্ভূত সম্পদ গড়েন উজ্জ্বল বড়ুয়া। প্রভাব বিস্তার করে নির্বাহী প্রকৌশলী থেকে অধস্তন, সবাইকে তটস্থ রাখতেন। কথায় কথায় সবাইকে সাবেক হুইপ সাইমুম সরওয়ার কমল, আওয়ামী লীগ নেতা ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়াসহ আওয়ামী লীগের কিছু নেতার ভয় দেখাতেন। ফলে একসময় বাধ্য হয়ে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী বরাবর লিখিত আবেদন করেছিলেন কক্সবাজারের তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান।
প্রধান প্রকৌশলী বরাবরে করা লিখিত ওই আবেদনে উল্লেখ করা হয়, ‘উজ্জল বড়ুয়া জনস্বাস্থ্যে যোগদানের পর থেকেই বিভিন্ন দুর্নীতি ও অপকর্মের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। একজন সরকারি চাকরিজীবী হয়েও প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতেন। কক্সবাজার জেলা শ্রমিক লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের কক্সবাজার জেলার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন উজ্জ্বল বড়ুয়া। এসব পদের বলে আওয়ামী লীগের ক্ষমতা ব্যবহার করেই অনিয়ম-দুর্নীতিতে লিপ্ত ছিলেন তিনি।’
লিখিত ওই আবেদনে আরও বলা হয়, কক্সবাজার জেলায় কর্মরত অবস্থায় বিভিন্ন উন্নয়ন কাজে ঠিকাদারের ইট, বালি ও সিমেন্ট সাপ্লাইয়ার হিসেবে পরিচিত ছিলেন তিনি। অঘোষিতভাবে নিজের লোক দিয়ে বাগিয়ে নিতেন ঠিকাদারী প্রকল্প। একইসঙ্গে উন্নয়নমূলক কাজে ব্যবহৃত মালামাল ল্যাবরেটরি টেস্টে পাঠালে সরকারি হিসেবের চাইতে অধিক টাকা দাবি করতেন উজ্জল বড়ুয়া। এভাবে ঠিকাদারদের জিম্মি করে বিপুল টাকা আয় করেছেন তিনি। তার পদোন্নতিতে সুপারিশ করেছিলেন নির্বাচন কমিশনের সাবেক সচিব হেলালুদ্দিন। বিপ্লব বড়ুয়া ও হেলাল উদ্দিনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সুবাদে ক্ষমতার অপব্যবহার করে রাতারাতি অফিস সহকারী থেকে ক্যাশিয়ার পদ বাগিয়ে নেন।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত উজ্জ্বল বড়ুয়া বলেন, ‘ভিডিওতে যাদের দেখা যাচ্ছে তাদের কোনো অভিযোগ আছে? এ বিষয়ে মন্তব্য করতে আমি ইচ্ছুক না। মিডিয়ায় বক্তব্য দেয়া নিষেধ আছে আমাদের।’
চুয়াডাঙ্গা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আমিনুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘মিডিয়ায় বক্তব্য দিতে হলে আমাদের অনুমতি নিতে হবে। এভাবে কথা বলতে পারবো না।’