ঢাকা অফিস
স্বামী শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।
বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) বিকেল সাড়ে ৪টার পরপরই রাজধানীর শেরে বাংলা নগরের জিয়া উদ্যানে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তার দাফন সম্পন্ন হয়।
বিকেল সোয়া ৪টায় খালেদা জিয়ার শেষ বিদায়ের কাজ শুরু হয়। বেগম খালেদা জিয়ার কবরে সবার আগে নামেন বড় ছেলে ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। মাকে কবরে শায়িত করে বিকেল সাড়ে ৪টার কিছুক্ষণ পর তিনি উঠে আসেন।
দাফনের পর কবরের উপরে মাটি ছিটিয়ে দেন বড় ছেলে তারেক রহমান। একে একে পুত্রবধূ জুবাইদা রহমান ও শামিলা রহমান, নাতি জাইমা রহমান এবং প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর দুই মেয়ে জাহিয়া রহমান ও জাফিয়া রহমানও কবরে মাটি ছিটিয়ে দেন।
এরপর সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান, বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খান ও নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল এম নাজমুল হাসানও কবরে মাটি দেন। দাফন কাজে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ স্থায়ী কমিটির কয়েকজন সদস্য অংশ নেন।
এর আগে বিকেল ৩টার পরপরই রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে বেগম খালেদা জিয়ার জানাজা সম্পন্ন হয়। জানাজার নামাজে ইমামতি করেন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব মুফতি আবদুল মালেক।
বিএনপির চেয়ারপাসন বেগম খালেদা জিয়াকে নিজ হাতে কবরে চিরনিদ্রায় শায়িত করলেন তার বড় ছেলে ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা, বিদেশি কূটনীতিক, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এবং সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ জানাজায় অংশ নেন। লাখো মানুষের শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতির একটি বর্ণিল ও দীর্ঘ অধ্যায়ের আনুষ্ঠানিক বিদায় সম্পন্ন হলো।
এদিন সকাল থেকেই প্রিয় নেত্রীকে শেষ বিদায় জানাতে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা লাখ লাখ মানুষের ঢল নামে জানাজাস্থল ও এর আশপাশের এলাকায়। মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ ছাড়িয়ে জনস্রোত আগারগাঁও, আসাদগেট, খামারবাড়ি, ফার্মগেট, কারওয়ানবাজার এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত হয়।
জানাজা শুরুর আগে প্রিয় নেত্রীর স্মৃতিচারণা করে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার রাজনীতিতে আসা ছিল আকস্মিক। কিন্তু দেশের প্রয়োজনে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ছিলেন অপরিহার্য।
এর পর বেগম জিয়ার বড় ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মা খালেদা জিয়ার পক্ষে ক্ষমা চেয়ে নেন। তিনি বলেন, ‘আমি মরহুমা বেগম খালেদা জিয়ার বড় সন্তান তারেক রহমান। আজকে এখানে যারা উপস্থিত রয়েছেন, মরহুমা বেগম খালেদা জিয়া জীবিত থাকা অবস্থায় যদি আপনাদের কারও কাছ থেকে কোনো ঋণ নিয়ে থাকেন দয়া করে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করবেন, আমি সেটি পরিশোধের ব্যবস্থা করব ইনশাআল্লাহ।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘একইসঙ্গে উনি জীবিত থাকা অবস্থায় উনার কোনো ব্যবহারে, উনার কোনো কথায় কেউ আঘাত পেয়ে থাকেন আমি উনার পক্ষ থেকে ক্ষমা প্রার্থী। দোয়া করবেন আল্লাহ যেন উনাকে বেহেস্ত নসিব করেন।’
গত ২৩ নভেম্বর থেকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন খালেদা জিয়া। আইসিইউতে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার অবস্থা অত্যন্ত জটিল এবং তিনি সংকটময় মুহূর্ত পার করছিলেন। মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) ভোর ৬টার দিকে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান তিনি। তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। তার মৃত্যুতে দেশে তিনদিনের রাষ্ট্রীয় শোক চলছে, বুধবার ঘোষণা করা হয় সাধারণ ছুটি।
