খুলনা প্রতিনিধি
বিয়ের আশ্বাসে তরুণীকে একাধিকবার ধর্ষণের অভিযোগে খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান গাজী এজাজ আহমেদসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা আমলে নিয়ে থানাকে এজাহার গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
বুধবার (৬ মার্চ) বিকেলে খুলনা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল-১ এর বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) মোসাম্মৎ দিলরুবা সুলতানা এ আদেশ দেন। তিনি ওই অভিযোগটি আমলে নিয়ে মামলাটি এজাহার হিসেবে নেয়ার জন্য ডুমুরিয়া থানাকে নির্দেশ দেন। তবে ভুক্তভোগীর খালাতো ভাই বাদীর অভিযোগ ধর্ষণের শিকার ওই তরুণী ও তার মাকে এলাকায় পাওয়া যাচ্ছে না। তাদের আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ করেন তিনি।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন- উপজেলা চেয়ারম্যান এজাজ আহমেদের চাচাতো ভাই রুদাঘরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গাজী তৌহিদুজ্জামান, গাজী আবদুল হক, আল আমিন গাজী, আক্তারুল আলম, সাদ্দাম গাজী ও মো. ইমরান হোসাইন।
মামলার আইনজীবী ও বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার খুলনার সমন্বয়কারী মোমিনুল ইসলাম বলেন, বুধবার সকালে আদালতে অভিযোগ দায়ের করা হয়। দুপুর সাড়ে ৩টার দিকে বিচারক ওই অভিযোগটি আমলে নিয়ে সেটি মামলার এজাহার হিসেবে নেয়ার জন্য ডুমুরিয়া থানাকে নির্দেশ দিয়েছেন। ডুমুরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্তকর্তা (ওসি) ঘটনাটি তদন্ত করে ওই সংক্রান্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করবেন।
আদালতে দেয়া অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, উপজেলা চেয়ারম্যান গাজী এজাজ আহমেদ দীর্ঘদিন ধরে বিয়ের আশ্বাসে ওই তরুণীকে ধর্ষণ করে আসছিলেন। গত ২৭ জানুয়ারি রাত সাড়ে ৮টার দিকে এজাজ আহমেদ ওই তরুণীকে শাহপুর বাজারে তার নিজস্ব কাযালয়ে ওই তরুণীকে নিয়ে জোর করে ধর্ষণ করে তাড়িয়ে দেন। পরে তরুণী ঘটনাটি তার দূর সম্পর্কের খালাতো ভাইকে জানালে সেই ভাই তরুণীকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তরুণীকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার জন্য ওয়ারস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) পাঠান।
পরের দিন ওসিসির সামনে থেকে আসামি তৌহিদুজ্জামাসহ ১০-১৫ জন আসামি তরুণী ও তার মাকে জোর করে একটি মাইক্রোবাসে অপহরণ করে নিয়ে যান। পরবর্তীতে ওই তরুণী ও তার মাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে অপহরণ করা হয়নি মর্মে স্বীকারোক্তি দেয়ার জন্য সোনাডাঙ্গা থানায় নেয়া হয়। পরে আবার সেখান থেকে মাইক্রোবাসে করে তাদের অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়।
অভিযোগে বলা হয়েছে, বিষয়টি খুলনাসহ সারা দেশে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করলেও সোনাডাঙ্গা ও ডুমুরিয়া থানা পুলিশ ওই তরুণী ও তার মাকে উদ্ধারে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। তাদের উদ্ধারের জন্য ডুমুরিয়া থানায় মামলা করতে গেলে থানা থেকে মামলা নেয়া হয়নি। এ কারণে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: লুডু খেলার কথা বলে দুই শিশুকে ধর্ষণ, যুবকের যাবজ্জীবন
বাদীর আইনজীবী মোমিনুল ইসলাম বলেন, ঘটনার পর থেকে ভুক্তভোগী তরুণীকে একটি ঘরে বন্দি রাখা হয়েছে। তাকে বাইরে বের হতে দেয়া হচ্ছে না। কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে দেয়া হচ্ছে না।
আর মামলার বাদীর (খালাতো ভাই) অভিযোগ, ভুক্তভোগী তরুণীকে হাসপাতালে ভর্তির পর থেকে চেয়ারম্যানের লোকজন তাকে তুলে নিয়ে যায়। চালানো হয় পাশবিক নির্যাতন।
এ ঘটনায় ডুমুরিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সুকান্ত সাহা বলেন, আমারা এখনও আদালতের কোনো আদেশ পাইনি। আদেশ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ওই তরুণী অপহরণের অভিযোগ কেউ করেননি। তাই তিনি বাড়ি আছেন কী নেই জানা নেই।
