নিজস্ব প্রতিবেদক: ইউরোপের ছয়টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে যশোরে তৈরি শৌখিন পাখির বাসা। এতে কর্মস্থল যেমনি বাড়ছে তেমনি দেশে আসছে বৈদেশিক মুদ্রা।
যশোর সদর উপজেলার চাউলিয়ার দাসপাড়া গ্রামের উদ্যোক্তা গৌরঙ্গ চন্দ্র দাস ঢাকা থেকে ব্যবসায়ীদের পাঠানো নমুনা দেখে পাখির বাসা তৈরি করেন। প্রায় ২শ শ্রমিকের মাধ্যমে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অর্ডার পাওয়া পণ্যগুলো রপ্তানি উপযোগী করে ঢাকায় পাঠান তারা। এগুলো পরে ঢাকার ব্যবসায়ীরা ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বিমান ও নৌপথে পাঠিয়ে দেন।
উদ্যোক্তার দাবি সারদেশে এ পাখির বাসার চাহিদা বাড়ছে। ইউরোপের জার্মানি, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস, স্পেন ও পর্তুগালের বিভিন্ন শহরে শৌখিন পাখি উৎপাদনের খামারে যাচ্ছে তার উৎপাদিত প্রায় ২৫ ধরনের পাখির বাসা। তিনি জানান, যশোরে দাসপাড়া, ধলিগাতী, এড়ান্দা, আবাদ কচুয়া গ্রামে তৈরি শৌখিন পাখির বাসার ইউরোপের বাজারে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
দাসপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, ঘরের বারান্দা ও আঙিনায় বসে পাখির বাসা বুননের কাজ করছেন কয়েকজন শ্রমিক। পুরুষেরা তৈরি করছেন পাখির বাসা বুননের মূল উপকরণ। নারীরা বাসা তৈরির জো তুলছেন। শ্রমিকেরা একসঙ্গে বসে বাসা তৈরির কাজ শেষ করছেন।
সরজমিনে দেখা গেছে, বাঁশ, নারকেলের ছোবড়া, পাট, শুকনা খড়, বিচালি, বাঁশ পাতা, খেজুরের ছাল, লতা, বেত, নেটের জাল, প্লাস্টিক পাইপ ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের পাখির বাসা তৈরি করছেন তারা। কাজের ফাঁকে গৌরঙ্গ চন্দ্র দাস বলেন, ‘৩৫ বছর হলো পাখির বাসা তৈরির কাজ করছি। ২৫ ধরনের পাখির বাসা বানাতে পারি। আমাদের সারা বছর ব্যস্ততা থাকে। ঢাকা থেকে বিভিন্ন ব্যবসায়ী আমাদেরকে কাজ দেয়। পাইকারি দামে এসব পাখির বাসা কিনে নিয়ে তারা ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাঠিয়ে দেন’।
গৌরঙ্গ চন্দ্র জানান, ‘এখন বিদেশি ক্রেতা বাড়ছে। অনেকেই এই শিল্পকর্ম শিখেছেন। তবে পুঁজি সংকটের কারণে এ পণ্যের রপ্তানি বাণিজ্যে যতটা প্রসার ঘটার কথা ছিল, ততটা ঘটেনি। সরকারি সহযোগিতা পেলে এবং নিজেরা সরাসরি রপ্তানি করতে পারলে এ শিল্পের মাধ্যমে আরও বেশি পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব।
স্থানীয় ইউপি সদস্য সাধন কুমার দাস বলেন, এখানকার উৎপাদিত পণ্যগুলো দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে। দেশি বিদেশি অনেক ব্যক্তিবর্গ এখানে এসে পরিদর্শন করে এসব পণ্য দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখা ও বিস্তার ঘটানোর জন্য শ্রমিকদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ দিলে এবং সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা পেলে ভালো কিছু সম্ভব।