যশোরে সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলামের স্মরণসভা
নিজস্ব প্রতিবেদক
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ৮৩ কোটি টাকা খরচ করে সংস্কার কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সভা করেছে। আমরা প্রতিটি সভাতে মতামত দিয়েছি। ১৭ অক্টোবর জাতীয় সংসদপ্লাজায় সকল দলের স্বাক্ষরে সংস্কারের প্রস্তাব পাশ হয়। পরে উপদেষ্টামন্ডলীর সভা শেষে আসিফ নজরুল বলেছেন এখনো যা বাকি আছে তা মিমাংসার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোতে সাত দিনের সময় দেওয়া হলো। মনে হচ্ছে রাজনৈতিক দল তাদের হাতের পুতুল।
যশোরে সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলামের স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা বলেন। বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির প্রয়াত সদস্য, সাবেকমন্ত্রী তরিকুল ইসলামের ৭ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে যশোর জেলা বিএনপির আয়োজনে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শহরের টাউন হল ময়দানে এই স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়।
উপদেষ্টাদের উদ্দেশ্য করে স্মরণসভায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আরও বলেন, অনেক রক্তের বিনিময়ে আমরা স্বাধীন হয়েছি। চব্বিশের আন্দোলনের পর সুযোগ হয়েছে গণতন্ত্রের পথে ফেরার। দয়া করে পানি ঘোলা করবেন না। দেশের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করবেন না।
বিএনপি মহাসচিব জোর দিয়ে বলেন, জাতীয় নির্বাচনের দিন গণভোট হবে, এর আগে নয়। সংস্কার কমিশনে আমরা যে সব বিষয়ে একমত হয়েছি, তার ভিত্তিতে কাজ শুরু করুন। যেগুলো হয়নি, সেগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত পার্লামেন্টে হবে। দ্রুত তফসিল ঘোষণা করুন। নির্বাচন দিয়ে দিন। অন্যথায় আপনারা ব্যর্থ হবে। সেক্ষেত্রে জনগণের কাছে জবাবদিহিতা করতে হবে।
প্রয়াত তরিকুল ইসলামকে স্মরণ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ফ্যাসিস্টের বিয়োগাত্মক বিদায় তিনি দেখে যেতে পারলেন না। তার বিদায়ে জাতি একজন দেশপ্রেমিক নেতাকে হারিয়েছে। তিনি একটি ইনস্টিটিউট ছিলেন। ছাত্র জীবন থেকে তিনি সংগ্রাম করেছেন জেল খেটেছেন, নির্যাতন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। কিন্তু জনগণকে ছেড়ে যাননি। তার মতো নেতার এখন খুব প্রয়োজন। তরিকুল ইসলামের মতো নেতা বারবার জন্মায় না। তাই তার জীবনী লেখা দরকার। যা থেকে পরবর্তী প্রজন্ম শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, কয়েকটি রাজনৈতিক দল নির্বাচনকে বানচাল করতে চক্রান্ত করছে। তারা ঘেরাও কর্মসূচির মাধ্যমে দেশকে আবারো অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র করছে। ফ্যাসিবাদের হাতে তুলে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করছে। এদেশের জনগণ কোনভাবেই তা মেনে নেবে না।
তিনি বলেন, তালবাহানা না করে দ্রুত নির্বাচনী শিডিউল ঘোষণা করুন। নির্বাচন অনুষ্ঠিত করুন। তা না হলে আপনারা ব্যর্থ সরকার হিসেবে চিহ্নিত হবেন। এজন্য আপনাদের জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হবে।
বিএনপির মহাসচিব আরো বলেন, অনেক শিশু আর সাধারণ মানুষের রক্তের বিনিময়ে ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে। আবার সেই জায়গায় ফিরে যাওয়ার জন্য যারা চক্রান্ত করছে তাদের মনে রাখতে হবে বিএনপি ভেসে আসা কোন দল না। অনেক হামলা, মামলা, কারাভোগ আর আত্মত্যাগের বিনিময়ে বিএনপি আজকে এই অবস্থানে এসেছে। বিএনপি জনগণের দল। দয়া করে পানি ঘোলা করবেন না। দেশকে অস্থিতিশীল করবে না। নৈরাজ্য শুরু করবেন না। বিএনপি রাস্তায় নামলে তখন পরিস্থতি ভিন্ন রূপ নেবে’।
তিনি বলেন, আর একদিন পর ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বর। ইতিহাসের এই দিনে জাতিকে ধ্বংসের চক্রান্ত হয়েছিল। কিন্তু, দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী ও জনগণ শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হাতে দেশের শাসনভার তুলে দিয়ে রাষ্ট্রকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করেছিল। এখানো যারা দেশকে ধ্বংস করার চক্রান্ত চালিয়ে যাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ফ্যাসিবাদের বিদায়ের পর দেশে গণতন্ত্র উত্তরণের যে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে তাকে সত্যিকারভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে আমাদেরকে শপথ নিতে হবে। শপথ নিতে হবে দেশকে আর কোন আধিপত্যবাদের হাতে তুলে দেব না। গণতন্ত্র হরণকারীদের হাতে তুলে দেব না এবং পতিত ফ্যাসিস্টদের আর ফিরতে দেব না।
জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবুর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন খোকনের সঞ্চালনায় স্মরণসভাটি কার্যত জনসভায় রূপ নিয়েছিল। এ সভায় যশোরে ধানের শীষের প্রার্থীদের জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার নির্দেশ দেন তিনি।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক অমলেন্দু দাস অপু, বিএনপির সাবেক দফতর সম্পাদক ও যশোর-১ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী মফিকুল হাসান তৃপ্তি, কৃষকদলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক ও যশোর-৪ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার টিএস আইয়ুব, যশোর-২ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী ও ঝিকরগাছা থানা বিএনপির সভাপতি সাবিরা নাজমুল মুন্নী, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও যশোর-৬ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য আবুল হোসেন আজাদ, জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. নজরুল ইসলাম, যশোর বারের সাবেক সভাপতি অ্যাড. মোহাম্মদ ইসহক, যশোর চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মিজানুর রহমান খান, যশোর নগর বিএনপির সভাপতি রফিকুল ইসলাম চৌধুরী মুল্লুক চাঁদ, সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আঞ্জুরুল হক খোকন, ইমাম পরিষদের সহসভাপতি মাও. আব্দুল মান্নান, বাঘারপাড়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি তানিয়া রহমান সুমি, শার্শা উপজেলা শাখার সভাপতি আবুল হাসান জহির, মনিরামপুর উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান মিন্টু, চৌগাছা বিএনপির সাবেক সভাপতি জহুরুল ইসলাম, বিএনপি নেতা জাহানারা সিদ্দিক, জাহাঙ্গীর বিশ্বাস, আলী আহম্মদ, মনোয়ার হোসেন, পূজা পরিষদের নেতা দীপঙ্কর দাস রতন, জেলা যুবদলের আহ্বায়ক তমাল আহমেদ, মাওলানা আব্দুল মান্নান, সাংবাদিক ইউনিয়ন যশোরের সভাপতি আকরামুজ্জামান, জেলা মহিলা দলের সভাপতি রাশিদা রহমান , জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মোস্তফা আমির ফয়সাল, জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান বাপ্পি প্রমুখ। স্মরণসভায় দোয়া পরিচালনা করেন মুফতি মাও. আমানুল¬াহ কাসেমী।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন তরিকুল ইসলামের সহধর্মিনী বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক নার্গিস বেগম এবং তার পুত্র কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক (খুলনা বিভাগ) ও যশোর-৩ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী অনিন্দ্য ইসলাম অমিত।
