নিজস্ব প্রতিবেদক
যশোর সদরের ঝুমঝুমপুর এলাকার রাজিম ওরফে সজিব (১৭) হত্যাকাণ্ডে আরো দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বহিনী। তারা হলেন শহরের বারান্দি মোল্লাপাড়া এলাকার রুস্তম গাজীর ছেলে শিমুল গাজী (২৫) ও ঝুমঝুমপুর চান্দের মোড়ের আবু বক্কর সিদ্দিকীর ছেলে রায়েব সিদ্দিক (১৭)। এরআগে শহরের বারান্দি মোল্লাপাড়া এলাকার ইয়াসিন বিশ্বাসের ছেলে মোহাম্মদ পায়েল (১৯) এবং পূর্ববারান্দীপাড়ার রাইজের ছেলে রায়হানকে (২০) গ্রেপ্তার করা হয়।
শনিবার পৃথক দুটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানিয়েছে র্যাব ও পুলিশ। এর আগে, শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজিম হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আটককৃত চার আসামিসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন নিহততের বাবা। পুলিশ ও র্যাব বলছে, বন্ধুর ছুরিকাঘাতের প্রতিশোধ নিতে অপর বন্ধুরা হত্যা করে রাজিমকে।
হত্যাকাণ্ডের শিকার রাজিম সদর উপজেলার ঝুমঝুমপুর স্কুল মোড় এলাকার বাদল খানের ছেলে। সে টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের দশম শ্রেণির ছাত্র ও শহরের চুড়িপট্টি এলাকার ভাই ভাই হোশিয়ারি দোকানের বিক্রয়কর্মী।
র্যাব-৬ যশোর ক্যাম্পের অধিনায়ক মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন জানান, রাজিম পড়াশোনার পাশাপাশি যশোরের বড়বাজার চুড়িপট্টি এলাকায় একটি দোকানে বিক্রয়কর্মী হিসেবে কাজ করতো। রাজিম ও গ্রেফতারকৃতরা একই কলেজে পড়াশোনা করত। গত এক মাস আগে সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া পায়েলের সঙ্গে পূর্বশত্রুতার জেরে নিহত রাজিম ছুরিকাঘাত করে গুরুতর আহত করে। এ ঘটনার পর থেকে রাজিমের উপর ক্ষিপ্ত ছিল পায়েলের বন্ধুরা। গত ৯ নভেম্বর রাত ৮টার দিকে পায়েল, শিমুলসহ কয়েকজন রাজিমকে দোকান থেকে ডেকে পাশের গলিতে চায়ের দোকানে নিয়ে যায়। এরপর সেখানে ছুরিকাঘাত করে। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় রাজিমের বাবা মামলা করেন। ওই ঘটনায় সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে জড়িতদের শনাক্ত করা হয়। এরপর গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শুক্রবার রাতে বারান্দি মোল্লাপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে পায়েলকে এবং গাড়িখানা রোড এলাকায় অভিযান চালিয়ে শিমুলকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি আরও জানান, গ্রেফতারকৃতরা জানিয়েছে পায়েল নামে তাদের এক বন্ধুকে রাজিম ছুরিকাঘাত করে। ওই ঘটনার প্রতিশোধ নিতে রাজিমের ওপর হামলা চালানো হয়েছিল। তাদের রাজিব হত্যা মামলায় আটক দেখিয়ে কোতোয়ালি থানায় সোপর্দ করা হয়।
অন্যদিকে যশোর পুলিশের পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, রাজিম হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সিসিটিভি ফুটেজ দেখে শনাক্ত হওয়া ৫ দুর্বৃত্তের মধ্যে রায়হান ও রায়েব সিদ্দিককে আটক করা হয়। এসময় হত্যাকাণ্ডের ব্যবহৃত রক্তমাখা চাকুসহ অন্যান্য আলামত উদ্ধার করা হয়। যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক বলেন, চুড়িপট্টি এলাকায় রাজিম হত্যাকান্ডে জড়িত ৫ জনই শনাক্ত হয়েছে। পুলিশ দুই জনকে আর র্যাব দুইজনকে আটক করা হয়েছে। পলাতক একজনকে আটকে অভিযান চলছে। ঘটনার পেছনে কেউ থাকলে তাকেও আটকের আওতায় আনা হবে। এ ঘটনায় পরিবারের পক্ষে মামলা দেয়া হয়েছে ৫ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ২/৩ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
এদিকে, নিহতের বাবা বাদল খান ও বড় ভাই হাফিজুর রহমান ঘটনায় জড়িতদের কঠোর শাস্তি দাবি করেছেন। রাজিম অসৎ সঙ্গ ত্যাগ করে দোকানের কাজে ও ঝুমঝুমপুর টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজে পড়াশুনায় মনোনিবেশ করেছিল। তারা ভেবেছিলেন এখন নিরাপদে থাকবে রাজিম। কিন্তু ঘাতকরা তাকে প্রাণে মেরে ফেললো। এদিকে একের পর এক উঠতি দুর্বৃত্তের হাতে যুবক ও কিশোর খুন হওয়ার ঘটনায় চরম উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোতে।