নিজস্ব প্রতিবেদক
যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ড। এ ওয়ার্ডে রোগীর শয্যার সংখ্যা ১৪। তবে প্রতিনিয়ত রোগী থাকছে ৮০ জনের বেশি। ফলে শয্যার এ সংকটে রোগীদের জায়গা হয়েছে ওয়ার্ডটির মেঝে, টয়লেটের সামনে ও বারান্দায়। শুধু মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ড নয়; হাসপাতালটির নারী, পুরুষ ও শিশু বিভাগের সর্বমোট ১৬টি ইউনিটের চিত্র এই রকম। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, যশোর জেনারেল হাসপাতাল আড়াই শ’ শয্যা। তবে বেডের সংখ্যা ২৭৮টি। তবে এই বেডের বিপরীতে প্রতিনিয়ত রোগী থাকে ছয় শতাধিক রোগী। তবে রমজান মাস হওয়াতে বুধবার রোগী ছিলো ৫৩৯ জন।
যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে প্রতিদিন ভর্তি থাকে ৬শ রোগী
১৬ ইউনিটের চিত্রই একই, রোগ মুক্তিতে এসে রোগাক্রান্ত অনেকে
যশোর ছাড়াও পাশ্ববর্তী জেলা নড়াইল, ঝিনাইদহ জেলার কয়েকটি উপজেলার মানুষের চিকিৎসা সেবার একমাত্র ভরসাস্থল যশোর জেনারেল হাসপাতাল। বছরজুড়ে এই হাসপাতালে শয্যাসংকট থাকে। হাসপাতালের প্রায় সবগুলো ওয়ার্ড ও ইউনিটের সামনের বারান্দা, করিডোরের সামনের ফাঁকা জায়গা, সিঁড়ির আশেপাশের জায়গা রোগী ও তাদের স্বজনরা পলিথিনের বেডশিট বিছিয়ে চিকিৎসা নেন। রোগী ও তাদের স্বজনেরা বলছেন, হাসপাতালে কয়েকদিন ভর্তি থাকার পরেও পাওয়া যায় না বেড। শয্যা সংকট থাকায় হাসপাতালের বারান্দা ও মানুষের চলাচলের রাস্তায় থাকতে হয় তাদের। এক বেডের জায়গায় থাকতে হয় একাধিক রোগীকে।
বুধবার দুপুরে হাসপাতালটি সরেজমিনে দেখা যায়, ‘শয্যা না থাকায় কেউ কেউ মেঝেতে বিছানা পেতে ঠাঁই নিয়েছেন। ওয়ার্ডের রোগীর স্বজনদের ভিড়। রোগীদের বিছানাপত্রের আশপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ময়লা-আবর্জনা, আছে দুর্গন্ধও। অনেক ওয়ার্ডে বেড তো দূরে থাক! মেঝে বা বারান্দায় জায়গা না হওয়াতে অন্য ওয়ার্ডের দরজার সামনে মেঝেতে পলিথিন পেতে চিকিৎসা নিতে দেখা গেছে। বারান্দা করিডোরের সামনের ফাঁকা জায়গা, সিঁড়ির আশেপাশের জায়গাতে রোগী ও স্বজনরা বিছানাতে পেতে চিকিৎসা নেওয়াতে সেসব জায়গায় কোন বিদ্যুতিক ফ্যান না থাকাতে হাত পাখা দিয়ে রোগীকে বাতাস করতে দেখা গেছে।
আরও পড়ুন:বঙ্গবাজারের আগুনের তাপ যশোরের ঈদ বাজারে
বাঘারপাড়া চাড়াভিটা গ্রামের হাবিরুন নেছা (৬৫) স্ট্রোক করে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন গত রোববার। জরুরি বিভাগ থেকে ব্যবস্থাপত্র দিয়ে তাকে ভর্তির জন্য পাঠানো হয় হাসপাতালের মহিলা মেডিসিন বিভাগে। কিন্তু ওই ওয়ার্ডে জায়গা না পেয়ে তিনি গাইনি ওয়ার্ডের সামনে বিছানা পেতে গত তিনদিন ধরে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এই রোগীর মেয়ে হুসনে আরা বলেন, ‘হাসপাতালে অনেক ভিড়। ওয়ার্ডে ভর্তি করেছি, ওয়ার্ডে জায়গা না হওয়াতে বারান্দাতে চিকিৎসা নিচ্ছি গত তিন ধরে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, গরীব মানুষ ভাইরে, ক্লিনিকে চিকিৎসা করাবো কি করে? সেখানে এতো টাকা খরচ করার সামর্থ্য তো আমাদের নেই। হাসপাতালের তৃতীয় তলায় শিশু ওয়ার্ডে শয্যা সংখ্যা ২৪টি। তবে এদিন রোগী ছিলো ৬৯টি। অন্য সময়ে এক শ’ বেশি রোগী থাকে বলে জানা গেছে। বেড না থাকাতে শিশুদেরও মেঝেতে রাখতে হয়েছে স্বজনদের। ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলার বজরাপুর গ্রামের আশরাফুল নামে এক রোগীর স্বজন জানান, ‘তার ৬ বছর বয়সী ছেলে অনেক অসুস্থ। দুইদিন ধরে বেড পায়নি। অসুস্থ ছেলেকে নিয়ে বেডেই রয়েছি। রোগ মুক্তির আশায় হাসপাতালে এসে দেখছি আরও বেশি রোগাক্রান্ত হয়ে যাচ্ছি আমরা।
গাইনি ওয়ার্ডে সালমা আক্তার নামে এক রোগী বলেন, ‘আমি এখানে ৪ দিন ধরে ভর্তি। এখানে কোনো বেড নেই। নিচ থেকে পাটি নিয়ে আইসে থাকতে হয়। তাও অনেক সমস্যা। এক পাটির ভিতরে দুই তিন জন আইসে বইসে থাকে। ফ্লোর অনেক শক্ত। আমাদের থাকতে অনেক কষ্ট হচ্ছে।’ এই ওয়ার্ডের নার্স মাহফুজা আক্তার বলেন, ‘এই ওয়ার্ডে ১২টি বেডের বিপরীতে রোগে থাকে ৪৫ জন। নার্স দুই শিফটে ৯ জন। চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খায়। তার পরেও চিকিৎসা সেবা দিতে কোন অপারগতা স্বীকার করি না। মহিলা মেডিসিন বিভাগের ইনচার্জ আকলিমা খাতুন বলেন, ‘রোগীর চাপে সেবা দিতে বিলম্ব হয়। অনেক সময় নিজেরা অসুস্থ হয়ে পড়ি। আবার ১৪ জন ছিটের জন্য ৪ জন নার্স নিয়োগ দেওয়া। সেখানে অতিরিক্ত রোগী থাকলে আমাদের সেবা; দিতেও নানা অসুবিধার মধ্যে পড়তে হয়।
হাসপাতালের তত্ত্ববাবধায়ক ডা. হারুন অর রশিদ বলেন, ‘আমাদের যশোর না, পাশাপাশি নড়াইল ঝিনাইদহ সমস্ত রোগী আমাদের এই হাসপাতালে সেবার জন্য আসে। আমরা ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত রোগী নিয়েও তাদেরকে সেবা দিয়ে যাচ্ছি। রোগীদের ঠিকমতো জায়গা দেওয়ায় এখন হাসপাতালের সবচেয়ে বড় সমস্যা। এখানে চিকিৎসার কোন যন্ত্রপাতি বা চিকিৎসকের কোন সংকট নেই। পাঁচশ’ শয্যায় উন্নতি হলে শয্যার সমাধান দূর হবে।
আরও পড়ুন:যশোর ছাত্রলীগের সভাপতির নেতৃত্বে আসাদ হল ভাংচুরের অভিযোগ
