নিজস্ব প্রতিবেদক
ভবদহ অঞ্চল মহাবিপর্যয়ে পড়তে যাচ্ছে বলে আশংকা করেছেন ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির নেতৃবৃন্দ। তাদের দাবি ভবদহ স্লুইচ গেট থেকে ৬০ কিলোমিটার নদী হত্যা করা হয়েছে। এজন্য যশোর শহর থেকে মোহনা পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার স্থায়ী জলাবদ্ধতার আশঙ্কা রয়েছে। ডুবে যাবে এ অঞ্চলের চার শতাধিক গ্রাম।
এলাকা পরিদর্শন শেষে সেই ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরে বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রেসক্লাব যশোর মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির সদস্য সচিব চৈতন্য কুমার পাল।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ভবদহ স্লুইচ গেটের ২১ ভেন্টে ৫০ মিটার সামনে নদীর মাঝে গভীরতা ৩ ফুট। ১০০ মিটার সামনে ৪ ফুট, ৯ ভেন্টের সামনে ৩ ফুট, দোহাকোলায় ২ ফুট, নদীর প্রশস্ততা ১২ ফুট, শোলগাতিয়া ব্রিজে ১ ফুট নদীর প্রশস্ততা ২০ ফুট, খর্ণিয়া ব্রিজে ২.৫ ফুট, নদীর প্রশস্ততা ব্রিজের নিচে ৪৮ ফুট, গ্যাংরাইল নদীর উপর শিবনগর ব্রিজে নদীর প্রশস্ততা ৪৮ ফুট, সেখানে গভীরতা ১০ ফুট।
বারোয়াড়িয়া ৪ নদীর মোহনায় ভাটির সময় ধু-ধু চর জেগে ওঠে। মানুষ নদীর মাঝে সুন্দরবন থেকে ভেসে আসা কাঠ কুড়াতে যায়। এক সময় যে মোহনায় ছিল অতল গভীরতা। বারোয়াড়িয়া মোহনায় ৪টি নদী একটি ভদ্রা গেছে রূপসায়, হাবরখানা নদী গেছে শিবসায়, জিরাবুনিয়া নদী কপোতাক্ষ হয়ে মিলিত হয়েছে শিবসায়, যেটির সংযোগ স্থান বর্তমানে বন্ধ করে রাখা হয়েছে। অপরটি গ্যাংরাইল নদী ভবদহ অঞ্চল থেকে মোহনায় মিশেছে। গ্যাংরাইল মোহনার মিলনস্থলে ভাটির সময় পানি থাকে ১০/১২ ফুট।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, নদীর উজান এবং মোহনা সচল না থাকলে নদীর মৃত্যু হয়। ভবদহ অঞ্চল দিয়ে প্রবাহিত নদী উজানে ভৈরব নদ বন্ধ করে রাখা হয়েছে। এবং সমুদ্র থেকে আশা পলিতে নদীসহ মোহনা ভরাট হয়ে গেছে। ফলে জলাবদ্ধতার এলাকা বিস্তৃত হয়ে যশোর সদর থেকে মোহনা পর্যন্ত প্রায় ১০০ কিলোমিটার নদী অববাহিকার ৪ শতাধিক গ্রাম জলাবদ্ধতা অনিবার্য করে তুলেছে। এই পরিস্থিতি পানি উন্নয়ন বোর্ড, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়, প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দিয়ে জানানো হলেও সরকারের পক্ষ থেকে কর্ণপাত করা হয়নি। বরং নদীকে হত্যা করা হয়েছে।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, স্থানীয়রা (টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট) টিআরএম বাস্তবায়নের দাবি করে আসছে দীর্ঘদিন। পানি উন্নয়ন বোর্ড জনমত উপেক্ষা করে ৩ কোটি ৮০ লক্ষ টাকার সেচ প্রকল্প গ্রহণ করেছে এবং ৪৫ কোটি টাকার সেচ প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রস্তাব দিয়েছে যে অর্থ সম্পূর্ণ অপচয় হবে এবং বরাবরের মতো জনদুর্ভোগ মারাত্মক আকার ধারণ করবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের অনৈতিক জনস্বার্থবিরোধী কার্যকলাপে ২১ ভেন্ট থেকে বারোআড়িয়া মোহনা পর্যন্ত ৫০-৬০ কিলোমিটার নদী হত্যা করা হয়েছে। সরকারের ভ্রান্তনীতি এই ভয়াবহ বিপর্যয়ের জন্য ভুমিকা পালন করছে।
এখনও ভবদহ স্লুইচ গেটের মুখ পর্যন্ত ৪ ফুট উচ্চতায় জোয়ার আসছে। ফলে এখনই টিআরএম চালু করলে সুফল পাওয়া যাবে। এবং এই জনপদ স্থায়ী বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা পাবে।
এমতাবস্থায় এই মহাবিপর্যয়ের হাত থেকে জনপদকে রক্ষার জন্যে এই মুহূর্তে আইডাব্লুএম ও ডেল্টা প্লানের প্রস্তাবনা বাস্তবায়ন এবং উজানে ভৈরব মাথাভাঙ্গার সাথে নদী সংযোগের দাবি জানানো হয়। একই সাথে নদী হত্যা ও দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান নেতৃবৃন্দ।
মহাবিপর্যয়ের হাত থেকে জনপদ রক্ষায় আগামী ৫ জুলাই জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান এবং কর্মসূচি সফল করার লক্ষ্যে মোহনা থেকে ভবদহ অঞ্চল পর্যন্ত প্রচার আন্দোলন গড়ে তোলার ঘোষণা দেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির প্রধান উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদ, উপদেষ্টা তসলিম-উর-রহমান, আহ্বায়ক রনজিত বাওয়ালী, জিল্লুর রহমান ভিটু, প্রফেসর অনীল বিশ্বাস, পারভীনা বেগম, চৈতন্য বিশ্বাস, আজিজ সরদার, মিজানুর রহমান, আজিজুর রহমান, পলাশ বিশ্বাস।