এম এ রাজা
২০১১ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই শামস-উল-হুদা ফুটবল একাডেমি আর সাফল্য একে অন্যের হাত ধরাধরি করে চলছে। প্রতিষ্ঠানটির সাফল্যের পালকে নতুন করে যুক্ত হলো আর একটি। প্রথম বারের মতো ল্যাটিন আমেরিকার দেশ বিশ্বফুটবলের চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনার একটি ক্লাবে অনুশীলনের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে যশোর শামস-উল-হুদা একাডেমীর তরুণ ফুটবলার মিনহাজুল করিম স্বাধীনকে। আর্জেন্টিনা ফুটবলের তৃতীয় বিভাগের দল এথলেটিকো ভিলা স্যান কার্লোস ক্লাবে এক মাসের অনুশীলনের সুযোগ পেয়েছেন স্বাধীন। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, স্বাধীনের এই আর্জেন্টিনা যাত্রায় নতুন করে বাংলার ফুটবলে স্বপ্ন দেখাবে তরুণদের।
বাংলাদেশের পেশাদার ফুটবলের দল শেখ জামাল ধানমন্ডির ট্রেইনার অ্যারিয়েল কোলম্যানের মাধ্যমে স্যান কার্লোস পেয়েছে স্বাধীনের খোঁজ। কোলম্যান মার্চে শামস উল হুদা একাডেমী পরিদর্শনে এসেছিলেন। উপভোগ করেন অনুশীলন ম্যাচ। কোলম্যানের নজর কাড়েন স্বাধীন। তরুণ স্বাধীনের খেলার ভিডিও পাঠানো হয় আর্জেন্টিনায়। তাতেই ভাগ্য খুলেছে তরুণ এ ফুটবলারের। এসেছে বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন দেশের ক্লাব থেকে ডাক ।
শামস-উল-হুদা একাডেমী সূত্রে জানানো হয়েছে, স্বাধীনকে স্যান কার্লোস ক্লাবের সাথে অনুশীলনের আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পত্রাকারে দেয়া হয়েছে। আগামী ১৫ আগস্টের মধ্যে স্বাধীনকে যোগ দিতে হবে আর্জেন্টাইন ক্লাবে। আর্জেন্টিনা থেকে আমন্ত্রণ পাওয়া স্বাধীন বয়সভিত্তিক ফুটবলের পরিচিত মুখ। খেলেছেন ২০২২ সালে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের যুব দল নিয়ে অনুষ্ঠিত বাফুফে অনূর্ধ্ব-১৮ লিগে চ্যাম্পিয়ন শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের হয়ে। আগামী মৌসুমে শেখ জামালের মূল দলে নিবন্ধন হওয়ার কথা স্বাধীনের। তিনি বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ঐতিহ্যবাহী ঢাকা ওয়ান্ডারার্সের হয়ে খেলেছেন ২০২১ সালে।
যশোরের পালবাড়ি এলাকার সন্তান স্বাধীন ২০১৬ সালে মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৪ সুপার ‘মখ’ কাপে বাংলাদেশের হয়ে খেলেছেন। ছিলেন ২০১৭ সালের নেপালের মাটিতে আয়োজিত অনূর্ধ্ব-১৫ সাফ দলের অংশ। খেলেছেন ২০১৮ সালে কাতারে অনুষ্ঠিত এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ আসরে। আর্জেন্টিনার ক্লাব থেকে ডাক পাওয়া স্বাধীন স্বাভাবিকভাবেই উচ্ছ্বসিত।
তিনি জানান, ‘আমার কাছে পুরো বিষয়টা স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে। আমি নিজে ছোটবেলা থেকে আর্জেন্টিনার ভক্ত। সেই আর্জেন্টিনায় আমি ফুটবল অনুশীলন করতে যাব, এটার চেয়ে বড় পাওয়া আর কি হতে পারে? স্বাধীনের বাবা অবসরপ্রাপ্ত সার্জেন্ট ফজলুল করিম নিজেও ফুটবল খেলেছেন সেনাবাহিনী দলের হয়ে। বাবার উৎসাহে তিনি বড় ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। সাথে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন শামস উল হুদা একাডেমীর প্রতিষ্ঠাতা নাসের শাহেরিয়ার জাহেদি, কর্মকর্তা আর কোচ কাজী মারুফের প্রতি।
শামস উল হুদা একাডেমীর সাথে শুরু থেকে জড়িয়ে আছেন কাজী মারুফ। তিনিই একাডেমীর ফুটবলার তৈরির প্রধান কারিগর, হেড কোচ। আর্জেন্টিনায় সুযোগ পাওয়া স্বাধীন প্রসঙ্গে কাজী মারুফ জানান, ‘স্বাধীন কয়েক বছর ধরেই বয়সভিত্তিক ফুটবলে নিজেকে প্রমাণ করে আসছে। সে তুখোড় উইঙ্গার। একদিন বাংলাদেশের সেরা উইঙ্গার হবার সম্ভাবনা তার মধ্যে রয়েছে। সে নিজে গোল করতে পারে। করাতেও পারে।’
তিনি আরও বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশ থেকে প্রথম ফুটবলার হিসেবে আর্জেন্টিনায় প্রশিক্ষণের জন্য যাচ্ছে। প্রশিক্ষণ শেষে দেশে এসে যদি ধারাবাহিকতা বজায় রাখে, তাহলে সে বড় খেলোয়াড় হবে।’
শামস উল হুদা একাডেমী থেকে বিদেশে প্রশিক্ষণের জন্য খেলোয়াড়দেও প্রেরণ করা নতুন না। ২০১৪ সালে এয়ারটেল রাইজিং স্টার্সের সাথে ইংল্যান্ডের বিখ্যাত ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সাথে প্রশিক্ষণের সুযোগ পেয়েছিলেন একাডেমীর ছাত্র হাফিজুর রহমান। ২০২২ সালে ব্রাজিলের সোসিয়েদাদ স্পোর্তিভো দ্য গামা ক্লাবের সঙ্গে অনুশীলনের সুযোগ পান বাংলাদেশের ১১ জন তরুণ ফুটবলার। যাদের একজন ছিলেন যশোরের বাঘারপাড়ার নয়ন হোসেন। তিনিও শামস-উল-হুদা একাডেমীর পরিচর্যায় গড়ে ওঠা ফুটবলার ।
২০১১ সালে সম্পূর্ণ ব্যক্তি উদ্যোগে যাত্রা শুরু করে যশোরের শামস উল হুদা ফুটবল একাডেমি। মাত্র এক যুগ সময়ের মধ্যে শামসুল-হুদা-একাডেমী এখন দেশের ফুটবলের আলোক-বর্তিকা। একাডেমিতে রয়েছে শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে থাকা, খাওয়া এবং চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা। খেলাধুলা, পড়াশুনার পাশাপাশি তাদের মানবিক ও সামাজিক মূল্যবোধেরও শিক্ষা দেয়া হয়। আর ফুটবলার হিসেবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খেলার দৃঢ় স্বপ্ন নিয়ে নিজেদের গড়ে তুলছেন ফুটবলাররা।
দেশের ফুটবল আবার হারানো গৌরবোজ্জ্বল সোনালি দিন ফিরে পাবে। দেশের অসহায়, দরিদ্র পরিবারের ছেলেরা বড় ফুটবলার হবে, নিজেদের ক্যারিয়ার গড়বে, দেশকে টেনে নিয়ে যাবে সামনের পথে-এমন অনেক বড় বড় স্বপ্ন নিয়েই প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলেছেন বিশিষ্ট শিল্পপতি রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. নাসের শাহরিয়ার জাহেদী। তিনিই একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। এটি পরিচালনায় সমস্ত অর্থের জোগানও দেন তিনি।