নিজস্ব প্রতিবেদন
শীতের তীব্রতা থাকবে আরও দিন তিনেক। মূলত পৌষ-মাঘ মাসে বাংলাদেশসহ এ অঞ্চলে শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পায়। উত্তরের হিমবায়ু হিমালয় থেকে বিহার হয়ে দেশের ভেতরে যতটা প্রবেশ করে শীতের তীব্রতা ততই বাড়ে। গত মঙ্গলবার থেকে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল ঘন কুয়াশায় ঢাকা রয়েছে। দেখা মিলছে না সূর্যের। তীব্র শীতে জবুথবু হয়ে পড়ছে মানুষসহ অন্যান্য প্রাণি। আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, হাড় কাঁপানো শীতের এ তীব্রতা শিগগিরই যাচ্ছে না।
জানতে চাইলে আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ বলেন, ’আবহাওয়ার যে অবস্থা চলছে তাকে শৈত্যপ্রবাহ বলা হয় না, বরং শীতের তীব্র অনুভূতি বলা হয়। আসলে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি তথা পৌষ-মাঘ মাসে আমাদের এ অঞ্চলে শীতের তীব্রতা বাড়ে। আগামী তিন দিন এই অবস্থা অব্যাহত থাকবে, সূর্যের দেখা মিলবে না। তারপর দুই থেকে তিন দিন কুয়াশা কিছুটা কমবে। পরে পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসবে। ‘
গত ২৪ ঘণ্টায় (সোমবার সকাল ৬টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৬টা) সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় কক্সবাজারের টেকনাফে ২৮ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
গতকাল সকালে ঢাকার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ১৪ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আজ সেটি দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমে দাঁড়ায় ১৪ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এ দুই দিনে কমেছে দুপুরের তাপমাত্রাও। গত মঙ্গলবার ছিল ১৮ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর গতকাল তা নেমে আসে ১৫ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আজ ভোরে যশোরের এলাকায় দেখা যায় ছিন্নমূল মানুষের কষ্টের চিত্র। সামান্য কাঁথা, কেউ পাটের বস্তার মধ্যে নিজেকে ঢুকিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে। মানুষের কষ্ট কিছুটা লাগব হলেও প্রাণিকূল হয়ে পড়েছে অসহায়। সেখানে দেখা যায়, সামান্য কিছু কাগজের মাঝে জবুথুবু হয়ে শূন্যের আকার ধারণ করে শুয়ে আছে একটি কুকুর।
এর আগে পহেলা জানুয়ারি আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষজ্ঞ কমিটি দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে জানিয়েছিল, জানুয়ারি মাসে সারা দেশে দুই থেকে তিনটি শৈত্যপ্রবাহ হবে। একটি হবে মাঝারি (৬-৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার) ধরনের। চলতি মাসে দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও মধ্যঞ্চলে এবং নদ-নদীর অববাহিকায় মাঝারি অথবা ঘন কুয়াশা এবং অন্যত্র হালকা বা মাঝারি কুয়াশা পড়তে পারে। এসব ঘন কুয়াশা কখনও কখনও দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।
নদ-নদীর অবস্থা সম্পর্কে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়, দেশের প্রায় সব নদ-নদীর স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ বিরাজমান থাকবে। আর কৃষি আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, চলতি মাসে দেশের দৈনিক গড় বাষ্পীভবন ২ দশমিক ৫০ থেকে ৩ দশমিক ৫০ মিলিমিটার ও গড় সূর্যকিরণকাল ৫ থেকে ৭ ঘণ্টা থাকতে পারে।
আজ সারা দেশে কোথাও সূর্যের দেখা মেলেনি। কুয়াশা ঢাকা ছিল আকাশ। সকালে শীতের তীব্রতা কিছুটা কম থাকলেও সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে শীত। আজ দেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৪ দশমিক ৪ ও সর্বনিম্ন ১৪ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে দেশের কোথাও বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
চিকিৎকরা জানান, শীতকালে ঢাকা শহরে ধুলা-বালি গরমকালের চেয়ে ১০ গুণ বৃদ্ধি পায়। শীতের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ে রোগবালাইও। এ সময় এ্যাজমা, গলাব্যথা, কাশি, নিউমোনিয়া দেখা দেয়। তা ছাড়া মানসিক রোগও বৃদ্ধি পায়।
এসব রোগবালাই থেকে বাঁচতে মাস্ক পরিধান করে বের হওয়ার পাশাপাশি সাধ্যমতো গরম কাপড় পরিধান করার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, গরম পানি পান করলে ভালো হয়। গোসলের ক্ষেত্রেও সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে। শিশু ও বয়স্কদের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে, তাদের বিশেষভাবে যত্ন নিতে হবে।