নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রধান শিক্ষককে জীবননাশের হুমকির পর এবার নিজ সংগঠন যুবলীগের এক নেতাকে খুনের হুমকি দিয়েছেন যশোর সদর উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মাজহারুল ইসলাম মাজহার। ১৩ এপ্রিল সদরের মনোহরপুর বাজারে ইছালি ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক দুখু মিয়াকে তিনি মোটরসাইকেলে উঠানোর চেষ্টা ও প্রকাশ্যে খুনের হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ১৬ এপ্রিল যশোর কোতোয়ালি থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন ভুক্তভোগী ওই যুবলীগ নেতা দুখু মিয়া। আর জিডির পরদিন রোববার বিকেলে তার বাড়ির সামনে গিয়ে মহড়া দিয়ে আতংক সৃষ্টি করেছেন অভিযুক্তরা। এসব বিষয় তিনি পুলিশকে জানানোর পাশাপাশি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিসহ নেতৃবৃন্দকে অবহিত করেছেন।
জিডি মতে, যশোর সদর উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মাজহারুল ইসলাম মাজহারের সাথে ইছালি ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক দুখু মিয়ার পূর্ব শত্রুতা রয়েছে। এরই জের ধরে মাজহারের নেতৃত্বে স্থানীয় সন্ত্রাসী তৌহিদ হোসেন, ইকরামুল হোসেন, আসিব হোসেন, বোরহান উদ্দিন ও সৈকত হোসেন মনোহারপুর বাজারের গোল চত্বরের সামনে ইছালি ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক দুখু মিয়াকে ঘিরে ধরেন। তাকে মোটরসাইকেলে উঠানোর চেষ্টা করা হয় এবং মা-বোন তুলে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে ও জীবননাশের হুমকি দেয়। স্থানীয়রা এগিয়ে এলে তিনি বেশি দিন বাঁচবে না বলে হুমকি দিয়ে চলে যায়। এ ঘটনায় দুখু মিয়া যশোর কোতোয়ালি থানায় জিডি করলেও কোন ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ। এতে আরো বেপরোয়া হয়ে উঠে হুমকিদাতারা। জিডির পরদিন তার বাড়ি সংলগ্ন রাস্তায় গিয়ে মোটরসাইকেলের মহড়া দিয়ে আতংক সৃষ্টি করে। বাড়িতে থাকা ছেলেপুলে ও নারীরা আতংকিত হয়ে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকেন। এ বিষয়টি তিনি স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়িকে জানায়। আবহিত করেন যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন ও সদর উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক অশোক বোসকে। নেতৃবৃন্দ ক্ষোভ প্রকাশ করলেও চুপ রয়েছে পুলিশ প্রশাসন।
এরআগে ইছালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কমিটি গঠন করা নিয়ে ২৪ মার্চ যশোর সদর উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মাজহারুল ইসলাম মাজহার বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক রবিউল ইসলামকে মুঠোফোনে হুমকি দেন। এর কথোপকথনের একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়। ৬ মিনিট ৮ সেকেন্ডের ওই কথোপকথনের অডিওতে শোনা যাচ্ছে, যুবলীগের নেতা মাজহারুল বারবার অকথ্য ভাষায় প্রধান শিক্ষক রবিউল ইসলামকে গালাগালি করছেন।
প্রধান শিক্ষকের উদ্দেশে মাজহারুলকে বলতে শোনা যায়, ২৪ ঘণ্টা পর যদি ওই শিক্ষক যশোরে থাকতে পারেন, তাহলে তিনি চুড়ি পরে ঘুরে বেড়াবেন। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী প্রধান শিক্ষক রবিউল ইসলাম জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে ৩১ মার্চ যশোর কোতোয়ালি মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। জিডিতে তিনি উল্লেখ করেছেন, যশোর সদর উপজেলার ইছালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর আগের কমিটির অগোচরে যুবলীগনেতা মাজহার ও তার সহযোগিরা এডহক কমিটির সভাপতি হিসাবে মনিরুজ্জামানকে নিযুক্ত করেন। এতে ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও অভিভাবকরা ওই কমিটির বিরুদ্ধে অনাস্থা আনাসহ একজন অভিভাবক হাইকোর্টে মামলা করেন। বর্তমানে এই মামলাটি চলমান রয়েছে। এর জের ধরে মাজহার তার ফোন থেকে কমিটি অনুমোদনের জন্য আবেদন করতে বলেন। তাকে কমিটির বিষয়ে মামলা চলমান রয়েছে জানালে গালিগালাজসহ জীবননাশের হুমকি দেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। ওই জিডিতে নিরাপত্তা চেয়ে তিনি প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছিলেন।
এদিকে, শিক্ষককে গালিগালাজ ও হত্যার হুমকি দেয়ার ঘটনা তদন্তের অনুমতি দেন আদালত। অভিযোগ তদন্তের জন্য ইছালী পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) মোকাররম হোসেনকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। কিন্তু তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। শুধু তাই নয় যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশে যশোর জেলা যুবলীগ ৮ এপ্রিল মাজহারকে ৪৮ ঘণ্টা সময় দিয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছিল। শোকজের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় ৯ এপ্রিল বহিস্কারের নির্দেশ দেয় কেন্দ্রীয় যুবলীগ। কিন্তু যশোর জেলা যুবলীগ বহিস্কার কার্যকর করেনি। এ নিয়ে দলের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।
১ Comment
বহিস্কার সাংগঠনিক ব্যবস্থা বাট আইনী ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।। এটা।দু:খজনক