বিচালীতেও আশা ভঙ্গ
যশোরে দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড
ভারি বর্ষণে সরিষা, মসুর, আলুসহ শীতের সবজি ক্ষেতে জমেছে হাঁটু পানি
সুনীল ঘোষ:
ভারি বৃষ্টিতে যশোরে রোপা আমন ধান ও বিচালীসহ মৌসুমী ফসলের ক্ষেত অথৈ পানিতে ভাসছে। ধানের লোকসান বিচালীতে পুষিয়ে নেয়ার প্রত্যাশায় ছিলেন চাষি। কিন্তু সেই প্রত্যাশা ভেসে গেছে টানা ৩দিনের ভারি বৃষ্টিতে। বিচালীসহ কৃষকেব ফসলের ক্ষেতে এখন হাঁটু পানি। সোমবার ভোর ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ১২১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, যা দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত-জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। ঘূর্ণিঝড় ‘জাওয়াদ’র প্রভাবে গভীর নিন্মচাপের কারণে আগামী আরো দু’িদন বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। কৃষকের দাবি বৃষ্টির পানিতে বেশকিছু ধান ক্ষেতে ভাসছে। সেই সাথে বিচালীতে পচন দেখা দিয়েছে। সবমিলিয়ে এবার রোপা আমন ধানের লোকসান পুষিয়ে নেয়ার সব পথ বন্ধ হয়ে গেল।
যশোর সদর উপজেলার কাশিমপুর গ্রামের কৃষক আসির উদ্দিন জানান, তিনি ৩ বিঘা জমিতে রোপা আমন ধানের চাষ করেছিলেন। যার মধ্যে দেড় বিঘার ধান কেটে বাড়িতে নিয়ে মাড়াই করার সুযোগ পাননি। পলিথিন দিয়ে ঢেকে রেখেছেন। বাকি দেড় বিঘার ধান কাটা হলেও ক্ষেত থেকে বাড়িতে আনতে পারেননি। সেই কাটা ধানের আটি পানির ওপর ভাসছে।
বীরনারায়নপুর গ্রামের কৃষক রেজাউল করিম জানান, শীতকালে যে এত বৃষ্টি হবে, তা কল্পনাও করতে পারিনি। তাঁর পেঁয়াজ ও রসুন ক্ষেতে হাঁটু পানি বেধেছে। এই সরার আগেই সব পচে গোবর হয়ে যাবে-এমন আশঙ্কা তার।
তিনি বলেন, অনেকে আগাম ধান কেটে সিটা সরিষার চাষ করেছিলেন। অনেকের আবার ফুলকপি, বাঁধাকপি, শসা, মুলা ও ওলকপি রয়েছে। সেইসব ক্ষেতে অথৈ-ই পানির ঢেউ খেলছে। মান্নান নামে এক চাষি জানান, তিনি মাত্র ৪দিন আগে আলুর বীজ বপন করেছেন কিন্তু সেই ক্ষেত এখন চেনার উপায় নেই। টানা বৃষ্টির পানিতে ক্ষেত তলিয়ে গেছে। আলু চাষে নেমে প্রথমেই হোঁচট খেয়ে তিনি হতাশায় দুমড়ে মুচড়ে পড়েছেন।
পাকদিয়া গ্রামের কৃষক সুমন দাশ জানান, রোপা আমনের লোকসান পুষিয়ে নিতে বিচালীর ওপর ভরসা করেছিলাম কিন্তু সেই বিচালীতে পচন ধরেছে। এরফলে রোপা আমনের লোকসান পুষিয়ে নেয়ার আর কোন উপায় থাকলো না। সদরের সুলতানপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল জলিল জানান, টানা বৃষ্টিতে তাঁর মতো সব চাষীর মাথায় বজ্রপাত পড়েছে! ধান-বিচালীসহ মৌসুমী ফসলের ক্ষেতে হাঁটু পানি বেধেছে। এসব ফসল কৃষকের ঘরে উঠবে না।
তিনি বলেন, কৃষকের ফসলের ক্ষেত যেমন পানিতে ডুবেছে তেমনি নিন্ম আয়ের মানুষের কাজ-কর্ম নেই। অনেকের ঘরে খাবার নেই। যেকারণে এমুহুর্তে নিন্ম আয়ের দিনমজুর মানুষের জীবন যাপনে চরম দুর্দশা নেমে এসেছে। তিনি বলেন, বৃষ্টিপাত আরও দু’একদিন অব্যাহত থাকলে কৃষকের মরণদশা হবে। সেই সাথে দিন আনা দিন খাওয়া মানুষের চুলায় হাড়ি চড়বে না।
যশোর বিমান বাহিনী নিয়ন্ত্রিত আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানানো হয়েছে-ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ’ দুর্বল হয়ে পড়ায় নিন্মচাপ গভীর নিন্মচাপে পরিণত হয়েছে। যেকারণে মঙ্গলবারও বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে। সূত্রের দাবি-সোমবার ভোর ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৬ ঘন্টায় যশোরে ৮২ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। এদিন যশোরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় টেকনাফে ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বোনি¤œ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় তেঁতুলিয়ায় ১৪ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এদিকে যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ^াস জানান, যশোরের বেশিরভাগ চাষী রোপা আমন ধান কেটে ঘরে তুলেছেন। সামান্য সংখ্যক কৃষকের ধান এখনো ক্ষেতে রয়েছে। তবে শীতকালীন সবজি মসুর, সরিষা ও আগাম আলু চাষীদের চরম ক্ষতিরমুখে পড়তে হয়েছে।
বিচালী বিক্রির টাকায় কৃষক ধানের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারতেন দাবি করে তিনি বলেন, এই টানা বৃষ্টিপাতের কারণে সেই সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে পড়েছে। এরফলে কৃষক আর্থিক ক্ষতির শিকার হয়েছেন। ক্ষতি পুষিয়ে নিতে করণীয় যা সম্ভব, তার সবটুকু কৃষি বিভাগ করবে।