এম এ রাজা :
‘এইটা ছাড়া ওদের আর কোন বোলার নেই। আর এটাই শেষ ওভার। এই ওভার পার করে দিতে পারলেই জয় আমাদের’। যশোর প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগের অন্যতম সফল দল জাগরণী সংসদের ড্রেসিং রুম থেকে এমনই বার্তা দিচ্ছিলেন ক্রিজে অপরাজিত দুই ব্যাটার নয়ন কুমার রায় ও হৃদয় ঘোষকে। তখনও গতবারের তৃতীয় হওয়া দলটির জয়ের জন্য প্রয়োজন ২৬ রান। হাতে ছিল দুই উইকেট।
সাত ব্যাটারকে প্যাভিলিয়নের পথ ধরানো ন্যাশনাল স্পোর্টিং ক্লাবের সোহেল উর সামান বাবু তখন জাগরণী সংসদের ব্যাটারদের কাছে মুর্তিমান আতঙ্কের নাম। দীর্ঘদিন শীর্ষ পর্যায়ে ক্রিকেট না খেলা বাবু নিজের শেষ ওভারের তিন বলের মধ্যে বাকি দুই উইকেট তুলে নিয়ে যশোর ক্রিকেট ইতিহাসে নয়া রেকর্ড গড়ে হারতে বসা ম্যাচে ন্যাশনাল স্পোর্টিং ক্লাবকে জয়ের আনন্দে ভাসান।
ডানহাতি মিডিয়াম পেসার নিজের শেষ ওভারে দ্বিতীয় বলটি লেগ-মিডল স্ট্যাম্প বরাবর পিচ করান। জাগরণী সংসদের অধিনায়ক নয়ন আড়াআড়ি খেলতে যান। হালকা সুইং করা বল ব্যাট মিস করে উড়ে যায় মিডল স্ট্যাম্প। একই লেন্থে পড়া পরের বলটি নতুন ব্যাটার মারুফ হাসানের পায়ে লাগে। ন্যাশনাল স্পোর্টিং ক্লাবের খেলোয়াড়ের আবেদনে আম্প্যায়ার প্রহ্লাদ সরকার আঙ্গুল উপরে উঠার সাথে সাথে ‘বিশ^জয়ের আনন্দে’ মাতে দলের খেলোয়াড় কর্মকর্তরা। বাবুর এমন দুর্দান্ত বোলিংয়ের আগে কোন সময়ই ম্যাচ জেতার মতো অবস্থায় ছিল না ন্যাশনাল স্পোর্টিং ক্লাব।
বুধবার শামস্-উল-হুদা স্টেডিয়ামে ন্যাশনাল স্পোর্টিং ক্লাবের করা ১২৩ রানের জবাবে ব্যাট করতে নেমে বাবুর বোলিং তোপে ৯৮ রানে গুটিয়ে যেয়ে ২৫ রানে ম্যাচ হারে জাগরণী সংসদ।
১২৩ রানের জবাবে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই বাবু’র বোলিং তোপে পড়ে ঝিকরগাছার দলটি। বাবু ৬ ওভারের প্রথম স্পেলে ৮ রানে নেন তিন উইকেট। বাবু যখন প্রথম স্পেল শেষ করেন তখন জাগরণী সংসদের ১১ ওভারে রান ছিল ২৫।
ম্যাচের ৬ ওভার পর বাবু যখন দ্বিতীয় স্পেলে বল হাতে নেন তখন জাগরণী সংসদের রান ৮২। মাঝে ছয় ওভারে এই দুজনে তুলে ফেলেন ৫৭ রান। দ্বিতীয় ওভারের প্রথম স্পেলের প্রথম বলে ফেরান ২৮ বলে অর্ধশতক করা সোহেলকে। পরের বলে তন্ময় বিশ^াসকে ফিরিয়ে হ্যাটট্রিকের সম্ভবনা জাগিয়েছিলেন। হ্যাটট্রিক না হলেও পরের ওভারের জয়ের বাধা হিসেবে থাকা নিপুনকেও তুলে নেন। মাঝে বাবুর বলে রান আউটে কাটা পড়ে নাঈমুল হাসান। ওই ওভারে জাগরণী আর এক অভিজ্ঞ ক্রিকেট দ্বিপ জ্যোতি মল্লিক ফুলটাসে বোল্ড করে দেন। এরপরই নিজের শেষ ওভারে বল হাতে নিয়ে জয় নিশ্চিত করেন। জাগরণী সংসদের সোহেল ৩০ বলে সর্বোচ্চ ৫২ রান করেন। ২৮ বলে ফিফটি করা সোহেল মারেন ৮টি চার ও তিনটি ছয়ের মার। সোহেলের পরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৪ রান করেন নিপুন।
জাগরণী সংসদের আউট হওয়া ১০ ব্যাটারের নয়জনই বাবু’র শিকার। ৯ ওভার তিন বল করে দেন মাত্র ১৪ রান। নয় উইকেটের মধ্যে নিপুনের উইকেটের ক্ষেত্রে উইকেটকিপার জয়ের সাহায্য নিয়েছেন। আর বাকি উইকেট গুলোর মধ্যে ছয়জনকে করেছেন বোল্ড। দুই জন হয়েছেন এলবিডব্লিউ।
এর আগে গতবছর যশোর দ্বিতীয় বিভাগ টায়ার-১ ক্রিকেট লিগে মুরাদ স্মৃতি সংঘের ডানহাতি মিডিয়াম পেসার আক্তারুজ্জামান শান্ত ৩৬ রান খরচায় ৮ উইকেট নিয়েছিলেন। যা এতদিন যশোর ক্রিকেট লিগে এক ম্যাচে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারে রেকর্ড হয়েছিল। শান্ত ভাঙ্গেন ২০১৮ সালে নিলয় রায়ের রেকর্ড। নিলয় প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লিগে ৩৭ রানে নেন ৮ উইকেট।
সর্বশেষ আসরে কোন রকমে রেলিগেশন বাঁচানো ন্যাশনাল স্পোর্টিং ক্লাব টস হেরে ব্যাট করতে নামে। নয়ন কুমার রায়-মঈনুল ইসলাম সোহেদের নিয়ে গড়া জাগরণীর বোলারদের বিপক্ষে প্রথম থেকে ধুঁকতে থাকে। কোন ব্যাটারই বড় ইনিংস খেলতে পারেনি। তাই ৪০ ওভার ৪ বল পর্যন্ত খেলেও স্কোর বোর্ডে ১২৩ রান জমা করতে পারে। ওপেনার রিমন সর্বোচ্চ ২৮ রান করতে পারে। এরপরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান করেন তালেব ২৬। এছাড়া দুই অঙ্কের কোটা স্পর্শ করতে পেয়েছে জয় (১৫) ও রাজিব (১৩)। জাগরণী সংসদের অধিনায়ক বাঁহাতি স্পিনা নয়ন রায় ১৮ রানে ৩টি, নাঈমুল হাসান ১৩ রানে ও মঈনুল ইসলাম সোহেল ২১ রানে দুটি উইকেট দখল করেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
টস : জাগরণী সংসদ
ন্যাশনাল স্পোর্টিং ক্লাব : ৪০.১ ওভার ১২৩/১০ (জয় ১৫, রিমন ২৮, সানি ০, অন্তিক ০, তালেব ২৬, পুতুম ৬, রাজিব ১৩, সামিন ৭, মানিক ৭, বাবু ৪, ফয়সাল ০; মারুফ হাসান ০/২৬, মঈনুল ইসলাম ২/২১, মাহমুদুল রনি ১/১১, নয়ন রায় ৩/১৮, দ্বিপ জ্যোতি মল্লিক ০/১৪, রাজু কুমার ০/১৩, নাঈমুল হাসান ২/১৩)।
জাগরণী সংসদ : ২২.৩ ওভার ৯৮/১০ (শাহিদুজ্জামান ৩, মাহমুদুল রনি ৯, রাজু কুমার ০, নিপুন ১৪, মঈনুল ইসলাম ৫২, তন্ময় বিশ^াস ০, দ্বিপ জ্যোতি মল্লিক ৫, নাঈমুল হাসান ২, নয়ন রায় ১, হৃদয় ঘোষ ৫*, মারুফ হাসান ০; বাবু ৯/১৪, ফয়সাল ০/১৬, তালেব ০/৩২, অন্তিক ০/৩৪)।
ফলাফল : ন্যাশনাল স্পোর্টিং ক্লাব ২৫ রানে জয়ী।