নিজস্ব প্রতিবেদক: কোটি কোটি বাঙালির স্বপ্ন বাস্তবে ধরা দিয়ে গত ২৫ জুন ঘটা করে উদ্বোধন হয়েছে পদ্মা সেতুর। পরদিন ২৬ জুন থেকেই এই সেতু বেয়ে দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় সড়কপথে যেতে যান চলাচল উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। সেই ধারাবাহিকতায় পদ্মা সেতুতে গাড়ি চললেও দেশের বৃহত্তম এই সেতু হয়ে রেল যোগাযোগ এখনও বাস্তবায়নের পথে। তবে এই অপেক্ষারও অবসান ঘটতে চলেছে শিগগিরই। কারণ, দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে পদ্মা সেতুতে রেলযোগাযোগ স্থাপন প্রকল্পের কাজ।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আগামী বছরের জুন নাগাদ সেতুটি দিয়ে রেলপথের কাজ শতভাগ সম্পন্ন করা যাবে। ফলে রেলে চড়ে এই সেতুর ওপর দিয়ে সরাসরি ঢাকা থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত যাওয়া যাবে শিগগিরই।
সূত্র জানায়, চলতি ২৭ নভেম্বর পর্যন্ত পদ্মা সেতুর রেললিংক প্রকল্পের কাজের সামগ্রিক অগ্রগতি হয়েছে ৬৭ শতাংশ। এর মধ্যে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত রেলপথের কাজের সামগ্রিক অগ্রগতি হয়েছে ৮৬ শতাংশ। ঢাকা থেকে মাওয়া পর্যন্ত পথের কাজ সম্পন্ন হয়েছে ৬৮ শতাংশ এবং ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত পথের কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৫৮ শতাংশ। এ পর্যন্ত পদ্মা রেললিংক প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৬৬ দশমিক ৩৩ শতাংশ।
প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, পদ্মা সেতু রেললিংক প্রকল্পের আওতায় ১৭২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যর ঢাকা-যশোর রেলপথ নির্মাণকাজের মেয়াদ ২০২৪ সাল পর্যন্ত। এই দীর্ঘ রেলপথে থাকবে ২০টি রেলস্টেশন। ১৬টি স্টেশন নতুন করে নির্মাণ করা হবে, আর পুরোনো চারটি স্টেশন ঢেলে সাজিয়ে করা হবে আধুনিক ও যুগোপযোগী। স্টেশনগুলোর নির্মাণকাজের অগ্রগতি চিত্রে দেখা যায়, মাওয়া থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত পথে স্টেশন নির্মাণকাজের অগ্রগতি হয়েছে ৫৮ শতাংশ, ঢাকা থেকে মাওয়া পর্যন্ত অগ্রগতি ২২ শতাংশ এবং ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত পথে স্টেশন নির্মাণকাজের অগ্রগতি হয়েছে ১১ শতাংশ।
ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার রেলপথে মধ্যে মাওয়া থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত পথের দূরত্ব ২৮ কিলোমিটার। রেল প্রকল্পের এই অংশের রেলপথের কাজ শতাভাগ সম্পন্ন হয়েছে। অর্থাৎ এই ২৮ কিলোমিটার রাস্তা এখন রেল চলাচলের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত। এ ছাড়া ঢাকা থেকে মাওয়া অংশের রেলপথের ৭ কিলোমিটার পথের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তবে ভাঙ্গা থেকে যশোর অংশের রেলপথের কাজের অগ্রগতি এখনও কম।
এই রেল প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে পদ্মা সেতুর ওপরের ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার পথ। জানা গেছে, পদ্মা সেতুর ওপর রেলপথের জাজিরা প্রান্তে ভায়াডাক্ট ও অ্যাপ্রোচ বসানোর কাজ শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে। এ কাজের মাওয়া অংশে সম্পন্ন হয়েছে ৬৬ শতাংশ। এ ছাড়া পদ্মা সেতুর ওপর রেলপথ বসানোর কাজ সম্পন্ন হয়েছে ৩ শতাংশ। পদ্মার রেল সেতুর নকশায় কিছুটা জটিলতা দেখা দেওয়ায় কাজ সাময়িক বন্ধ ছিল। তবে নকশা অ্যাডজাস্ট করার পর এখন পুরোদমে কাজ চলছে বলে জানা গেছে।
দক্ষিণবঙ্গে রেল যোগাযোগের অংশ হিসেবে মোট ১৭২ কিলোমিটার রেলপথের কাজকে তিন ভাগে ভাগ করা হচ্ছে। এরমধ্যে প্রথম ভাগ ঢাকার গেন্ডারিয়া থেকে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া পর্যন্ত। এছাড়া মাওয়া থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত অংশ পড়েছে দ্বিতীয় ভাগে। আর শেষভাগে ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত অংশের কাজ সম্পন্ন হবে। এ ক্ষেত্রে মাওয়া থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত দূরত্ব ২৮ কিলোমিটার। রেল প্রকল্পের এই অংশের কাজ ইতোমধ্যেই শতভাগ শেষ হয়েছে। অর্থাৎ এই ২৮ কিলোমিটার রাস্তা এখন রেল চলাচলের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত। তবে ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে যশোর অংশের রেলপথের কাজের অগ্রগতি এখনও কম বলে জানা গেছে।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা সেতু রেললিংক প্রকল্পের আওতায় মোট ১৭২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যর ঢাকা-যশোর রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের মেয়াদ নির্ধারিত রয়েছে ২০২৪ সাল পর্যন্ত। দীর্ঘ এই রেলপথে মোট ২০টি স্টেশন থাকবে। এরমধ্যে ১৬টি স্টেশন নতুন করে নির্মাণ করা হবে। সেই সঙ্গে পুরোনো চারটি স্টেশনও আধুনিক ও যুগোপযোগী করে সাজানো হবে।
এ বিষয়ে সম্প্রতি পদ্মা সেতু রেললিংক প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক আফজাল হোসেন গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ থাকলেও আমরা আশা করছি, তার আগেই সব কাজ শেষ করতে সক্ষম হবো। এরমধ্যে আগামী জুন নাগাদ ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত রেলপথের কাজ আমরা শতভাগ সম্পন্ন করতে পারব বলে আশা করছি।
বর্তমানে পদ্মা সেতুর ওপরের অংশ ছাড়ও সেতুর উভয় পাশে পুরোদমে কাজ চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, পদ্মা সেতুর ওপরের অংশের দুই প্রান্তে প্রতিদিন দুটি টিম ৫০ মিটার করে দিনে ১০০ মিটারের নির্মাণকাজ এগিয়ে নিচ্ছেন। যে গতিতে কাজ চলছে আশা করছি, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই আমরা লক্ষ্যে পৌঁছে যাব।
প্রকল্পের অর্থায়ন নিয়েও কোনো সমস্যায় পড়তে হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন আফজাল হোসেন। তিনি বলেন, চীন কিংবা বাংলাদেশ সরকারের অংশে এখন পর্যন্ত অর্থ পেতে আমাদের কোনো সমস্যায় পড়তে হয়নি। তবে নানা কারণে আমরা আশঙ্কা করছি, আগামী বছর সরকারি অংশ থেকে অর্থছাড় পেতে কিছুটা সমস্যায় পড়তে হতে পারে। তবে সে জন্য আগে থেকেই সরকারের কাছে ৩০০ থেকে ৪০০ কোটি টাকা বরাদ্দের বিষয়ে চাহিদাপত্র দিয়ে রাখা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন পদ্মা সেতু রেললিংক প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক আফজাল হোসেন।
এদিকে, রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজনও দ্রুতই পদ্মা সেতু ঘিরে রেল চলাচলে আশার কথা জানিয়েছেন। সম্প্রতি রেলসেবা সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, আগামী বছরের জুনের মধ্যে পদ্মা সেতু দিয়ে রেলপথে ঢাকার সঙ্গে ফরিদপুরের ভাঙ্গা যুক্ত হবে।
দেশের সব জেলাকে রেল সংযোগের আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে জানিয়ে তিনি আরও বলেছেন, সরকারের উদ্যোগে ভবিষ্যতে রেলওয়েতে বিদ্যুৎচালিত ট্রেনও যোগ হবে। এছাড়া সারাদেশের মিটার গেজ রেললাইনকে পর্যায়ক্রমে ব্রডগেজে রূপান্তরের উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে উদ্যোগ নেওয়ার দুই বছর পর (২০১৮) এই প্রকল্পের আওতায় পদ্মা সেতু ও এর দুই প্রান্তে রেললাইন নির্মাণের কাজ শুরু হয়। এর আওতায় ইতোমধ্যেই পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছে সরকারের সেতু বিভাগ। তবে সেতু দিয়ে ট্রেন চলাচল নিশ্চিতের দায়িত্ব রেল কর্তৃপক্ষের। এ লক্ষ্যে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার দীর্ঘ রেললাইন বসানো এবং স্টেশনসহ অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণে আলাদা প্রকল্প নেয় রেলওয়ে। এছাড়া জিটুজি (সরকারি পর্যায়ে) পদ্ধতিতে বাস্তবায়নাধীন এই প্রকল্পে অর্থায়ন করছে চীন। প্রকল্পে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা।
আরও পড়ুন: রাতভর অভিযানে ডাকাত চক্রের ১০ সদস্য গ্রেফতার