ঢাকা অফিস
মাস দুয়েক পরেই রমজান। বাংলাদেশের বাজার সংস্কৃতিতে রমজানে পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়া এক রকমের অঘোষিত রেওয়াজ। তবে এবার রমজানের আগেই ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন জানিয়েছে, গত রমজানের তুলনায় এবার পণ্যের দাম ৩০ শতাংশ বেশি বাড়বে।
সম্প্রতি জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের এক বৈঠকে ট্যারিফ কমিশনের উপপ্রধান মাহমুদুল হাসান জানান, দেশীয় বাজারে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বৃদ্ধি ও আন্তর্জাতিক বাজারে অস্থিরতার কারণে আগামী রমজানে ভোগ্যপণ্যের দাম গত রমজানের তুলনায় ৩০ শতাংশ বাড়বে।
মূলত টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বাড়ার পর থেকে আমদানি সীমাবদ্ধ করতে ২০২২ সালের অক্টোবর থেকে এলসি (লেটার অব ক্রেডিট) খোলায় নানা ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। এতে করে নভেম্বরে এলসি খোলার হার কমে গেলেও ডিসেম্বর মাস থেকে তা আবার বাড়তে শুরু করে। তবে ছোট ব্যবসায়ীদের দাবি, এলসি খোলার ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন তারা। বড় ব্যবসায়ীদের ব্যাংক সহজেই এলসি খুলতে দিচ্ছে; কিন্তু ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা এলসি খুলতে গেলে পোহাতে হচ্ছে নানা রকমের ঝামেলা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বরে এলসি খোলার হার কমেছে ১৪ শতাংশ। এছাড়া এলসি নিষ্পত্তির হারও ৯ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে।
ব্যবসায়ীরা এলসি খুলে অবাধে ভোগ্যপণ্য আমদানি করতে না পারলে রমজানে পণ্যের দাম বাড়বে বলে মনে করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। এদিকে এলসি খোলায় সমান সুবিধা না পেলে বাজারে বড় ব্যবসায়ীদের চলমান মনোপলি আরও প্রকট আকার ধারণ করবে। বিশেষ করে হাতেগোনা ব্যবসায়ীরা পণ্য আনলে পণ্য মজুত ও সিন্ডিকেটের অশুভ শক্তি আরও বেশি মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং ও ইন্স্যুরেন্স বিভাগের অধ্যাপক এম মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, এলসি খোলায় বৈষ্যমের সবচেয়ে বড় কারণ ব্যাংক চালায় বড় ব্যবসায়ীরা। তারা নিজেদের সুবিধা দিয়ে বাকিদের বঞ্চিত করে। এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মনিটরিং ব্যবস্থাও বেশ দুর্বল। ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের হাতে যদি ব্যাংক থাকে তাহলে সেটা তো সাধারণ মানুষের ব্যাংক হলো না। এছাড়া বড় ব্যবসায়ীদের এলসি খুলে দেয়া থেকে শুরু করে নানা ধরনের বাড়তি সুবিধা দিলে ব্যাংক কর্মকর্তারা অনৈতিক অনেক সুবিধা পেয়ে থাকেন। অনেক অসৎ কর্মকর্তা এসব সুবিধার লোভে বড় ব্যবসায়ীদের অগ্রাধিকার দেন।’
এম মুজাহিদুল ইসলাম আরও বলেন, বাজার মনিটরিংয়ের মাধ্যমে সিন্ডিকেট সামাল দেয়া, মনোপলি ব্যবসা বন্ধ করা, মজুতদারীদের শাস্তি দেয়া থেকে শুরু করে আনুষাঙ্গিক ব্যবস্থা না নিলে বাজারে পণ্যের দাম কমানো যাবে না।
সম্প্রতি বায়ার্স ও সাপ্লায়ার্স ক্রেডিটের মাধ্যমে রমজান মাসকে কেন্দ্র করে ঋণের মাধ্যমে পণ্য আমদানির সুযোগ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আগে এ ঋণ পরিশোধে ব্যবসায়ীরা ৩-৪ মাস সময় পেলেও, বর্তমানে এটি বাড়িয়ে ৬ মাস করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। মূলত রমজানে যাতে খাদ্য পণ্যের ঘাটতি দেখা না দেয় তাই এই সুবিধা দেয়া হচ্ছে ব্যবসায়ীদের।
সম্প্রতি রংপুর ক্রিকেট গার্ডেনে রংপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের উদ্যোগে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আসন্ন রমজানে কোনো পণ্যের সংকট হবে না এবং দামও বাড়বে না। যদি কোনো ব্যবসায়ী অবৈধ মজুত ও কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে এসব পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি করার চেষ্টা করে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এদিকে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজার দর বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত মাসের তুলনায় মসুরের ডাল ৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ, রসুন ৫ দশমিক ৮৮ শতাংশ, আদা ৩ দশমিক ৭০ শতাংশ, খোলা সয়াবিন প্রতি লিটারে ৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ, এক লিটারের বোতলজাত সয়াবিন ৪ দশমিক ৭৬ শতাংশ ও লুজ পাম অয়েল ১৮ দশমিক ৭১ শতাংশ বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে।
আরও পড়ুন: শিশুদের যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে : প্রধানমন্ত্রী